বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৮ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ শুরু

নারীদের কর্মক্ষেত্রে ধরে রাখতে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার প্রয়োজন

আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২২, ০৫:০১

৩৮ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে থাকলেও সব কর্মক্ষেত্রসহ জনসমাগম হয় এমন স্থানে নেই মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও শিশু যত্ন কর্নার। বিজ্ঞজনেরা বলেন, নারী কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে এসে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও তাদের কর্মপরিবেশ নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে। এতে যেমন কর্মক্ষেত্র থেকে নারীর ঝরে পড়ার আশঙ্কা আছে, তেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণে সৃষ্টি হচ্ছে অন্তরায়। এমন বাস্তবতার মধ্যে আজ পহেলা আগস্ট থেকে ‘মাতৃদুগ্ধ পান এগিয়ে নিতে শিক্ষা সহযোগিতা হবে বাড়াতে’ প্রতিপাদ্য করে শুরু হলো বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ।

২০০৬ সালে দেশে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার বা মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ করার জন্য আইন করা হয়েছে। ২০০৯ সালে দেশে নারীর ক্ষমতায়ন উত্সাহিত করতে প্রধানমন্ত্রী জনসমাগম হয় এমন স্থানসহ কর্মক্ষেত্রে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার বা মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ স্থাপনের নির্দেশ দেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের ৯ মাসের শিশুকে নিয়ে জনসমাগম হয়, এমন স্থানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার করার জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী মা ইসরাত হাসান। তারপর দেশের সবগুলো আদালতসহ কর্মক্ষেত্র, বিমানবন্দর, বাস, রেলওয়ে স্টেশন ও শপিংমলে মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। ইসরাত ইত্তেফাককে জানান তার জানা মতে, প্রায় সবগুলো আদালতে স্থাপন হয়েছে মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ। তবে সব জনসমাগম হওয়া স্থানে নেই মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ। তৎক্ষণাৎ ১১ থেকে ১২ টি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ছিল ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরসহ কয়েকটি রেলওয়ে স্টেশন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে প্রতিটি কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে বিষয়টি মানা হচ্ছে কি না, তা মনিটরিংয়ের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

পরিস্থিতি এখন কেমন : ইসরাত জানান সব লঞ্চ, বাস এবং ট্রেন স্টেশনে এখনো মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ নেই। প্রতিদিনই আমরা দুধের শিশু নিয়ে বাইরে বের হওয়া মায়েদের নানা কৌশল করে দুধ খাওয়াতে দেখি। একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করা শারমিন জানান, তার মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হলে, অফিসে আসার সময় ফ্রিজে দুধ সংরক্ষণ করে আসতেন। এক সরকারি কর্মজীবী মা জানান, তার মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে মতো শিশুর জন্য ফরমুলা দুধের নাম নেন তিনি। অথচ আইনমতে ফরমুলা দুধ কোনো চিকিৎসক লিখে দিতে পারেন না। কোনো চিকিৎসক যদি তা দেন তাহলে তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন। গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের প্রায় ৮০ শতাংশ নারী। তবে সব গার্মেন্টস কারখানায় আক্ষরিক অর্থে মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ নেই বলে জানান ১০টি কারখানায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ফুলকির সিনিয়র ট্রেনার তহুরুন নেসা লাকী। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনার ১২ বছর পরও দেশে মাত্র ৩০ শতাংশ কর্মস্থলে ব্রেস্টফিডিং কর্নার আছে। ৭০ শতাংশ কর্মক্ষেত্রেই মানা হয়নি নির্দেশনা।

বিজ্ঞজনেরা যা বলেন :২০২১সালে শিশুদের বুকের দুধ পান করানোয় মায়েদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ বিশ্বের ৯৮টি দেশ নিয়ে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে। এতে আত্মতৃপ্ত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, রাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো নারীকে কর্মক্ষেত্রে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সেবাগুলো দিতে পারছে না। ফলে নারীর এগিয়ে যাওয়া যেমন ঝুঁকির মুখে পড়ছে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মও অপুষ্টিতে ভুগছে। বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. এস কে রায় বলেন, শিশু যাতে মায়ের দুধ পেতে পারে সেজন্য মাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে হবে। ব্রেস্টফিডিং কর্নার প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম করোনার জন্য পিছিয়ে গেছে। এখন প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

ইত্তেফাক/ইআ