বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তেল শোধনাগার নির্মাণে কুয়েতকে পাশে চায় সরকার

আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২২, ০৭:০১

দেশে জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার নির্মাণে কুয়েতকে সঙ্গী হিসেবে চায় সরকার। ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট (ইআরএল-২) নির্মাণে ফ্রান্সের কোম্পানি টেকনিপ সরে যাওয়ার পর এ অবস্থান নিয়েছেন এ খাতের শীর্ষ ব্যক্তিরা। মূলত সাড়ে সাত বছর আগের এক আলোচনা এবং চিঠির সূত্র ধরে কুয়েত পেট্রোলিয়াম ইন্টারন্যাশনাল (কেপিআই) ফেরাতে বিদ্যুৎ , জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। ২০১২ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০১৪ সালের ১২ জুন বিদু্যত্ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০-র আওতায় দরপত্র আহ্বান ছাড়াই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ফ্রান্সের কোম্পানি টেকনিপের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ঐ বছরেরই ডিসেম্বরে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাবনা জমা দেয় ফরাসি কোম্পানিটি।

খসড়া প্রকল্প পরিকল্পনায় (ডিপিপি) ইআরএল-২ নির্মাণের খরচ ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে টেকনিপ প্রাথমিকভাবে ৬০ কোটি ডলার (প্রায় ৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা) বাংলাদেশকে ঋণ হিসেবে দিতে সম্মত হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাকি টাকা সংগ্রহে সহযোগিতা করার নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু ২০১৬ সালের মার্চের শুরুর দিকে তারা এ প্রস্তাব থেকে সরে আসে। শুধু ইপিসি (প্রকৌশল, প্রকিউরমেন্ট ও নির্মাণ) ঠিকাদার হিসেবে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে টেকনিপ। ঐ বছরের এপ্রিলে ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডকে (ইআইএল) পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। কয়েক মাস পর নভেম্বরে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ও বিপিসি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে তেল কিনে দেশে বেশি দামে বিক্রি করে বিপিসির সঞ্চিত অর্থ থেকে এ প্রকল্পে খরচের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কাজ আর শুরু হয়নি। দফায় দফায় প্রকল্পের প্রস্তাবিত খরচ বেড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ানোর পর এ বছরের (২০২২) মে মাসে প্রকল্পটিতে আর আগ্রহী নয় বলে বিপিসিকে জানিয়ে দেয় টেকনিপ। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন এক প্রকার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে গত ১৬ জুন কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (কেপিসি) বাংলাদেশে তেল পরিশোধনাগার নির্মাণে সহায়তা ও বিনিয়োগে আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ জুন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের উপ-সচিব লাইলাতুন ফেরদৌস স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বাংলাদেশে নিযুক্ত কুয়েতের রাষ্ট্রদূতকে পাঠানো হয়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বৈঠক ও চিঠি আদান-প্রদানের তথ্য তুলে ধরে ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে। এখানে তেল পরিশোধনাগার নির্মাণে কেপিআই বা কেপিসি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কেপিআই বাংলাদেশে একটি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার স্থাপন করতে পারে। দেশে তেল পরিশোধনাগার নির্মাণে কুয়েত আগের প্রস্তাব-আলোচনা পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, টেকনিপ ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট প্রকল্পটিতে আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছে। সেটি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে বিপিসি তা অনুসরণ করবে।

বর্তমানে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। বিপরীতে একমাত্র সরকারি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিন টন তেল পরিশোধন করতে পারে। এই পরিমাণ ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল (মারবান ও এএলসি) আমদানি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বাকি প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত তেল আমদানি করতে হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিপিসিকে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ইআরএল-২ নির্মিত হলে দেশে তেল পরিশোধন ক্ষমতা তিন গুণ বেড়ে বার্ষিক ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়াত।

ইত্তেফাক/ইআ