২৮ বছর আগে দেশে সংঘটিত হয়েছিল আনসার বিদ্রোহ। ঐ বিদ্রোহের দায়ে চাকরিচ্যুত হন কয়েক হাজার আনসার সদস্য। চাকরিচ্যুত আনসার সদস্যদের মধ্যে যাদের বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে, তাদের পুনরায় চাকরিতে বহালের রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের ঐ রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক আপিল করেন আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালক ও রাষ্ট্রপক্ষ।
দীর্ঘ শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার ঐ আপিলের ওপর রায় ঘোষণা করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে পর্যবেক্ষণসহ আপিলগুলো নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম।
রায়ের পর উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে আদালতে আসা শত শত চাকরিচ্যুত আনসার সদস্যকে। তাদের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার অনীক আর হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়টি আপিল বিভাগ বাতিল করেনি। পর্যবেক্ষণ দিয়ে আপিলগুলো নিষ্পত্তি করেছে। আমি মনে করি, এ কারণে আনসার সদস্যরা কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’ তবে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, ‘কী পর্যবেক্ষণ দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলেই তা জানা যাবে। এর আগে এটা বলা ঠিক হবে না যে আনসার সদস্যরা সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আপিলগুলো সর্বোচ্চ আদালত খারিজ না করে নিষ্পত্তি করে দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আনসার সদস্যদের কৌঁসুলিরা বলছেন, ওনারা সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কিন্তু আমি মনে করছি, আনসার সদস্যরা সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।’
রেশন ও বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু দাবিতে ১৯৯৪ সালে আনসার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। পরে সেই অসন্তোষ বিদ্রোহে রূপ নেয়। ঐ আনসার বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেনাবাহিনী, বিডিআর ও পুলিশের সহযোগিতায়। বিদ্রোহের ঘটনায় কয়েক হাজার আনসার সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাদের অনেককে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে কিছু কর্মকর্তাকে পরে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। যাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি, তারা রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেও বিফল হন। পরে চাকরিচ্যুতদের মধ্যে ২৩৬২ জন চাকরিতে পুনর্বহাল ও পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একাধিক রিট করেন। ঐ রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে চাকরিতে পুনর্বহালের রায় দেয় হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়েছিল, যাদের শারীরিক-মানসিক সক্ষমতা আছে, তারাই চাকরি ফেরত পাবেন। কিন্তু যাদের সক্ষমতা নেই, তারা যত দিন চাকরিতে ছিলেন, তাদের তত দিনের পেনশন-সুবিধা দিতে বলা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আনসার ভিডিপির মহাপরিচালক ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক পৃথক আপিল দায়ের করেন। ঐ আপিলের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, আনসার ভিডিপির মহাপরিচালকের পক্ষে কামাল উল আলম ও কামরুল হক সিদ্দিকী এবং আনসার সদস্যদের পক্ষে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সালাহ উদ্দিন দোলন ও অনীক আর হক শুনানি করেন। শুনানি শেষে গতকাল আপিলগুলো পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেয় আপিল বিভাগ। সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন, ‘পর্যবেক্ষণসহ আপিল নিষ্পত্তি করায় ধারণা করছি এটা আনসার সদস্যদের জন্য ইতিবাচক হবে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।’