টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও এক নারীকে গণ-ধর্ষণের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) ভোরে টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রাজা মিয়া (৩২) টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গোরস্থান এলাকার মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে। বাসের চালক ও হেলপারকে জিম্মি করার পর রাজা গাড়ি চালিয়েছিলো এই ডাকাতদলের সদস্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।
পুলিশ সুপার বলেন, চলন্তবাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় ডাকাতদলের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজা টাঙ্গাইলের যাত্রীবাহী বাস ঝটিকা সার্ভিসের একজন চালক। দীর্ঘদিন যাবত সে টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল।
এ ব্যাপারে বাসের যাত্রী কুষ্টিয়ার হেকমত বাদি হয়ে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে গণধর্ষনের শিকার ঐ নারীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে।
বাসের যাত্রী ও পুলিশের ভাষ্যমতে, কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী নৈশ বাসে যাত্রী বেশে ডাকাত দল উঠে প্রথমে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে যাত্রীদের হাত পা, চোখ বেধে মারপিট ও জিনিসপত্র লুট করে। তারপর এক নারীকে গণধর্ষণ করে। সব ঘটনা শেষে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের উল্টোপাশে বালির ঢিবিতে বাস উঠিয়ে দিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় ডাকাত দল। আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ওই সদস্যরা টানা তিন ঘণ্টা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের উপর এমন তাণ্ডব চালায়।
কুষ্টিয়ার বড়াইগ্রাম থেকে ঈগল পরিবহণের বাস (নম্বর পাবনা-ব-১১-০১৫৪) গত মঙ্গলবার অন্তত ৩০-৩৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পথে এমন ঘটনার শিকার হয়।
বাসের যাত্রীরা জানান, নাটোরের বড়াই গ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবিব ওই বাসের নিয়মিত যাত্রী। বাসের সুপার ভাইজার রাব্বি ও হেলপার দুলাল তার পূর্বপরিচিত। কিন্তু বাসের চালক ছিলেন নতুন। বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে নৈশভোজের জন্য যাত্রা বিরতি দেয়া হয়। দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাধে ব্যাগ বহনকরা ১০-১২জন তরুণ যাত্রী উঠে। বাসের প্রায় সবাই ঘুমে ছিলেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ওই তরুণদল ঘুমন্ত যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে একে একে সকলকেই বেধে ফেলে। প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেধে চালককেও জিম্মি করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
বাস যাত্রী হাবিবুর রহমান বলেন, এ পাশবিকতা ৭১ এর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের উদ্ধার করে। রক্তিপাড়া জামে মসজিদের ইমামসহ অন্যরা তাদের নাস্তাও করিয়েছেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার তারাগুনিয়া গ্রামের শিল্পী বেগম অসুস্থ মেয়ে জেসমিনকে চিকিত্সার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। বুধবার কানের অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। তিনি জানান, তার কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে ডাকাতরা। এসময় তার স্বামী পিয়ার আলীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আহত করেছে ডাকাতরা।
বেসরকারি চাকুরিজীবী নারায়নগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ নাটোর থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন অসুস্থ মাকে দেখার জন্য। বেতনের ২২ হাজার ৮০০টাকা ডাকাতরা নিয়ে গেছে। ভাতিজারা সব নিয়া গেলা? এমন প্রশ্ন শুনে তাকে ১০০ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে বলে জানান আব্দুর রশিদ।
সকালে সংবাদ পেয়ে মধুপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে করে থানায় নিয়ে যায়। গাড়িতে থাকা দেশিয় অস্ত্র উদ্ধারের কথা স্বীকার করেছেন মধুপুর থানার উপপরিদর্শক এনামুল হক। পুলিশের সহযোগিতায় বাসটি উদ্ধার করা হয়।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মধুপুর থানায় অবস্থান করে তিনিসহ সংশ্লিষ্টরা বাসযাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ময়মনসিংহ থেকে আসা ডিএনএ পরীক্ষাগারের কর্মীদের থানায় অবস্থান করতে দেখা গেছে।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন জানান, সমস্ত ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কাজ চলছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, গ্রেফতারকৃত রাজাকে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) আদালতে তোলা হবে। বাকি আসামীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।