মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

শোকাবহ আগস্ট

‘ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে বললেন, আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে’

আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২২, ০২:২০

তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু এটা জানতেন। কিন্তু দেশের মানুষ তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে—এটা মনে হয় বঙ্গবন্ধু কল্পনাও করতে পারেননি। জ্যামাইকায় কমনওয়েলথ সম্মেলনে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধু যেখানে বসেছিলেন সেখানে ওঠে এসে বলেছিলেন, ‘শেখ সাহেব, আমাদের কাছে উদ্বেগজনক খবর আসছে। আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’ উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ম্যাডাম ইন্দিরা, চিন্তা করবেন না। কোনো বাঙালি আমার গায়ে হাত তুলবে না। যদি তোলে, চাদর ঘাড়ে নিয়ে গ্রামে চলে যাব। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার লোক শেখ মুজিব না।’

ড. কামাল হোসেনের স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। কামাল হোসেন বলেন, এমনকি বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করেন, তখন আমি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে চলে যাই উচ্চতর পড়াশোনার জন্য। মার্চে বঙ্গবন্ধু ডেকে পাঠান। তার সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, ‘খবর রাখো। কিছু ক্যাপ্টেন, মেজরের সঙ্গে মন্ত্রিসভার সিনিয়র কলিগরা রাতে মিটিং করছে।’ তিনি তখনই আমাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জয়েন করার কথা বলেন। তার পরপরই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জ্যামাইকা যাই।

আর যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, তার পরপরই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো বাংলাদেশকে ‘ইসলামি রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। আর এ স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় যে, এ হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

আমি ঠিক করি, প্রথমে লন্ডনে যাব। সেখানে গিয়ে ঠিক করব পরবর্তী করণীয়। এ সময় ড. ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনা আমাকে বলেন, আমি যেন কোনোভাবেই  মোশতাকের সরকারে যোগ না দিই। আমি তাকে আশ্বস্ত করি যে, কোনোভাবেই আমি এই ঘৃণ্য কাজ করব না। এবং আমি তা করিওনি।

লন্ডনে পৌঁছেই আমি হাইকমিশনারকে লাল পাসপোর্টের বদলে সবুজ পাসপোর্ট দিতে বলি। এ সময় ঢাকা থেকে বারবার আমার খোঁজ করা হচ্ছিল। লন্ডনেও ফোন করে বলা হয়েছে—ড. কামাল হোসেনকে পেলে সঙ্গে সঙ্গে যেন ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আমার খবর তারা পাননি। আমি সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে অক্সফোর্ডে উচ্চতর পড়াশোনা শুরু করি।

এ সময় বারবার ঢাকা থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। মেজর জিয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছিলেন সরকারে যোগ দিতে। এমনকি বিদেশে ডেলিগেট টিমের নেতৃত্ব দিতেও অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু আমি রাজি হইনি। সরাসরি না করেছি। বলেছি, এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়।

এ সময় দেশে আওয়ামী লীগের সংগঠনকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সব রকম চেষ্টা চলছিল। কিন্তু জোহরা তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ঘুরে দাঁড়ায়। তিনি সারা দেশে ঘুরে ঘুরে ঐতিহ্যবাহী এই দলটিকে আবারও মাথা তুলে দাঁড়াবার শক্ত ভিত্তি দেন। এ সময় ১৯৮০ সালে সংগঠন আবারও পুরোপুরিভাবে দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় লন্ডনে আসেন শেখ হাসিনা। সেখানেও আমার সঙ্গে কথা হয়। বলেন, আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আমরা তখন শেখ হাসিনার সসম্মানে দেশে ফেরার ব্যবস্হা করি। এ সময় দলের সাংগঠনিক কাঠামো বদলানো হয়েছিল। কেননা, তখন দলের ভেতরে গ্রুপিংয়ের আভাস দেখা দিয়েছিল। সেজন্য যৌথ নেতৃত্ব কাঠামোর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দলের চেয়ারম্যান হন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে দলের হাল ধরেন শেখ হাসিনা।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি