জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহুল বিতর্কিত শিফট পদ্ধতিতেই এ বছরও ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি ইউনিটে ভিন্ন প্রশ্নে পাঁচ কিংবা তারও অধিক শিফটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো শিফটে প্রশ্ন কঠিন আবার কোনো শিফটের প্রশ্ন সহজ হচ্ছে বলে অভিযোগ ভর্তিচ্ছুদের। ফলে একই ইউনিটের কোনো এক শিফট থেকে অধিক শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় এসেছে আবার অনেক শিফট থেকে হাতেগোনা কয়েক জন মেধা তালিকায় আসে। এতে যেমন মেধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না তেমনি বাড়ছে বৈষম্য বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বমোট সাতটি শিফটে অনুষ্ঠিত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৪৬৬টি আসনের মধ্যে দ্বিতীয় শিফট থেকে মেধা তালিকায় স্হান পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৪৫ জন, যা মোট আসনের ৩১.১২ শতাংশ। অন্যদিকে ৬ষ্ঠ শিফটে সর্বনিম্ন মেধা তালিকায় স্হান পেয়েছে মাত্র সাত জন, যা মোট আসনের মাত্র ১.৫ শতাংশ। এছাড়া প্রথম শিফট থেকে ৯২ জন, তৃতীয় শিফট থেকে ৩৮, চতুর্থ শিফট থেকে ৩০ জন, পঞ্চম শিফট থেকে ১১৮ জন ও সপ্তম শিফট থেকে ৩৬ জন মেধা তালিকায় স্হান পেয়েছে।
এ ছাড়া মোট পাঁচটি শিফটে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘বি’ ইউনিটের ফল বিশ্লেষণ করেও বৈষম্য দেখা যায়। ‘বি’ ইউনিটের পঞ্চম শিফট থেকে মেধা তালিকায় স্হান পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৭৫ জন, যা মোট আসনের ৪৪.৩ শতাংশ। অন্যদিকে প্রথম শিফটে সর্বনিম্ন মেধা তালিকায় স্হান পেয়েছে মাত্র ৩৪ জন, যা মোট আসনের মাত্র ৮.৮ শতাংশ। এছাড়া দ্বিতীয় শিফট থেকে ৫৯ জন, তৃতীয় শিফট থেকে ৫১ ও চতুর্থ শিফট থেকে ৬৭ জন মেধা তালিকায় স্হান পেয়েছে। এর মধ্যে মেধা তালিকার শীর্ষ ২০ জনের মধ্যে ছেলে ১১ জন ও মেয়ে ১৩ জন স্হান পেয়েছে পঞ্চম শিফট থেকে। ভর্তি পরীক্ষার পরিদর্শক কয়েক জন সিনিয়র শিক্ষক ইত্তেফাককে বলেন, ‘এ’ ইউনিটের কয়েকটি শিফটে প্রশ্ন অত্যাধিক কঠিন হয়েছিল। আবার কয়েকটি শিফটের প্রশ্ন ছিল তুলনামূলক সহজ। এর আগেও কয়েকটি ইউনিটে এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয় না বরং বৈষম্য বাড়ে। তাই শিফট পদ্ধতি বাতিল করে বিকল্প পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া উচিত।
এদিকে জাবির ভর্তি পরীক্ষায় শিফট পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে অবস্হান কর্মসূচি পালন করেন শোভন রায় ও তানভীর নেওয়াজ নামে দুই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘একক প্রশ্নপত্রে মূল্যায়ন চাই’ প্ল্যাকার্ড হাতে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে ভাস্কর্যের পাদদেশে একই দাবিতে আবারও অবস্হান কর্মসূচি পালন করেন শোভন রায়।
অবস্হানকারীদের মধ্যে শোভন রায়ের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ও ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নেন। এছাড়া তানভীর নেওয়াজের বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নেন।
শোভন রায় বলেন, জাবির ভর্তি পরীক্ষার শিফট পদ্ধতি এক ধরনের বৈষম্য। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর মেধার সঠিক যাচাই হয় না। কোনো শিফটের পরীক্ষা সবচেয়ে সহজ হয়, আবার কোনো শিফটে পরীক্ষা কঠিন হয়। ফলে জাবির চলমান শিফট পদ্ধতি বাতিল করা উচিত। তানভীর নেওয়াজ বলেন, ‘শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় বৈষম্যের শিকার হয়েছি। কারণ কোনো শিফটে প্রশ্ন সহজ হয়; আবার কোনো শিফটে কঠিন হয়। এতে মেধার সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব না। ’
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় শিফট পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল না করতে পারলেও কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছি। আগামী বছর শিফট কমিয়ে আনার বিষয়ে চূড়ান্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে।’