এক সময় জমিদারি ছিল। ছিল বিপুল অর্থবিত্ত, প্রচুর ভূসম্পত্তি ও প্রভাবপ্রতিপত্তি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে জীর্ণশীর্ণ বাড়িটুকু ছাড়া আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। অর্থবিত্ত আর প্রভাব প্রতিপত্তির সেই জৌলুশ হারিয়ে তীব্র অভাব-অনটন ভর করেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিঠাভোগ গ্রামের আদি বংশধর কুশারীদের দুটি পরিবারের সদস্যদের ওপর।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষের বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে। কবিগুরুর পূর্বপুরুষ রামগোপাল কুশারী ছিলেন এই গ্রামের অধিবাসী। তবে কুশারীদের আদি বাড়িটি এখন আর নেই। কয়েক বছর আগে প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন ভবনটি ভেঙে ফেলে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘পিঠাভোগ রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহশালা’। এই স্মৃতি সংগ্রহশালার পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর দুটি পরিবারের ১৩ জন সদস্য এখনো বসবাস করছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষ রামগোপাল কুশারীর ১৭তম বংশধর গোপালচন্দ্র কুশারী বলেন, রাম গোপাল কুশারীর ছেলে জগন্নাথ কুশারী বিয়ে করেছিলেন ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামের শুকদেব রায় চৌধুরীর মেয়েকে। এ বিয়ে জগন্নাথ কুশারীকে সমাজচ্যুত করে। প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে তিনি শ্বশুরালয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেই বসত গড়েন জগন্নাথ কুশারী। তার পঞ্চম পুরুষ পঞ্চানন কুশারী ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় চলে যান। কলকাতার গোবিন্দপুরের আদি গঙ্গার পাড়ে এক জেলেপল্লিতে বসতি গড়েন তিনি। ব্রাহ্মণ হওয়ায় জেলেদের কাছে পঞ্চানন কুশারী ছিলেন নমস্য ব্যক্তি। তারা তাকে শ্রদ্ধাভরে ডাকত ঠাকুর মশাই। কালক্রমে তিনি ঠাকুর নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। ব্রাহ্মণ হওয়ার কারণে পিঠাভোগের কুশারী বংশের লোকদেরও স্থানীয়রা ‘ঠাকুর’ বলে সম্বোধন করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুশারীদের ১৩তম বংশধর ছিলেন।
গোপালচন্দ্র কুশারী বলেন, দাকোপ উপজেলার বাজুয়ার ১ একর ৭৬ শতক জমি দখল হয়ে গেছে। তেরখাদার জমি, ফকিরহাটের বৈতলী মৌজায় জমিও আর দখলে নেই। সর্বশেষ তার পিতা মানিকলাল কুশারী ও কাকা গৌরমোহন কুশারীর ৮-১০ একর জমি ছিল। তবে, এর অধিকাংশ জমি এখন নামে থাকলেও দখলে নেই। পিঠাভোগের পৈতৃক বাড়িটি ছিল ৯ একর ৩৫ শতক জমির ওপর। বর্তমানে আছে মাত্র ৪ বিঘা। বাড়ির পাশে পূর্বপুরুষদের শানবাঁধানো পুকুরটিও আর তাদের নেই। অভাব-অনটনের কারণে পুকুরটিও শরিকরা বিক্রি করে দিয়েছেন। যে জমি দখল হয়ে গেছে, তা উদ্ধারেও কেউ সহযোগিতা করেন না।
গোপালচন্দ্র কুশারী আরও বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী শিল্পী কুশারী রূপসায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) একটি প্রকল্পে স্বল্প বেতনে চাকরি করি। দুই জনের সামান্য আয় দিয়ে বৃদ্ধা মা ও ছোট ভাই মানসিক প্রতিবন্ধী গোবিন্দচন্দ্র কুশারীর ওষুধ ও সন্তানের লেখাপড়া করানোসহ সংসার চালাতে ভীষণ কষ্ট হয়। প্রায় প্রতিদিনই ‘পিঠাভোগ রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহশালা’ দেখতে ও আমাদের (রবীন্দ্রনাথের বংশের লোক) সঙ্গে কথা বলার জন্য দেশ-বিদেশের সাংবাদিক-গবেষকরা আসেন। কিন্তু অনেক সময় তাদের এককাপ চা পান করাতেও পারি না। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্ট ও লজ্জার।’
রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া তাসনিম বলেন, ‘কুশারীরা খুবই অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ। আমরা চেষ্টা করব কীভাবে তাদের সাহায্য দেওয়া যায়। এছাড়া সরকারিভাবে ২২ শে শ্রাবণ পিঠাভোগে বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবসও পালনের চেষ্টা করব।’