শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বেড়ে যাবে

অর্থনীতিবিদদের অভিমত

আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২২, ০৩:০০

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বেড়ে যাবে। পরিবহনের পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে।

নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে এত বেশি বাড়ানো ঠিক হয়নি। ধাপে ধাপে বাড়ালে সাধারণ মানুষের কাছে সহনীয় হতো। এছাড়া এখন বিশ্ববাজারেও জ্বালানি তেলের দাম কমছে।

এ প্রসঙ্গে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে অনেকখানি বাড়ানো হয়েছে। এর জন্য সাধারণ মানুষ প্রস্তুত ছিল না। তিনি বলেন, একসঙ্গে এত বেশি দাম বাড়ানো উচিত হয়নি। ধাপে ধাপে বাড়ালে ভালো হতো। মানুষের কাছে সহনীয় হতো।

কাওরান বাজার। ছবি: বিপ্লব মল্লিক

তিনি বলেন, ভর্তুকি একটা পর্যায় পর্যন্ত দেওয়া যায়। কিন্তু বেশি ভর্তুকি দিলেতো সরকার প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারবে না। তবে জ্বালানি তেলের দাম এত বাড়ায় উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এতে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর বেশি চাপ পড়বে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম কমছে। তবে আমাদের দেশে সমস্যা হলো একবার দাম বাড়লে আর কমে না। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

সরকার আইএমএফের ঋণ পেতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে কি না—এ প্রশ্নে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আইএমএফের ঋণ পেতে নানা শর্ত থাকে, যেগুলো মানতে হয়। তবে বাংলাদেশের অবস্থা এত খারাপ হয়নি যে, আমাদের আইএমএফের ঋণ নিতেই হবে। তাদের কোনো শর্ত মানতে হবে। আর আইএমএফের ঋণ নিয়ে কোনো দেশ ভালো করেছে বলে আমার জানা নেই।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ প্রসঙ্গে গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, জ্বালানি তেলের এই মূল্য বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দেবে। সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়বে বলে আমি মনে করি। পরিবহন খরচ বাড়বে। তবে পরিবহন খরচ ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি বাড়ানো উচিত হবে না। ভোক্তার স্বার্থে এটা কঠোরভাবে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

ছবি: বিপ্লব মল্লিক

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের উপর আঘাতটা আসবে সবচেয়ে বেশি। কারণ, তেলের দাম বাড়ায় পরিবহনের পাশাপাশি নিত্যপন্যের দাম বেড়ে যাবে। অনেক মানুষ দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্র হয়ে পড়বে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার নিজের প্রয়োজনেই তেলের দাম বাড়িয়েছে। কারণ, তেলের দাম বাড়লে টাকাতো সরকারই নেবে। কোনো ঋণদাতা সংস্থা নেবে না। 

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। এর আগে প্রতি লিটার কেরোসিন ও ডিজেল ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা আর পেট্রোল ৮৬ টাকা ছিল।

ইত্তেফাক/এএএম