সরকারি নির্দেশ অমান্য করে রাজধানীতে গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানী ঢাকায় প্রতি কিলোমিটার (কিমি) বাসের ভাড়া ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা করা হলেও যাত্রীরা দাবি করেছেন তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এতে নগর জুড়ে যাত্রী ও পরিবহন-শ্রমিকদের মধ্যে নানা বিরোধের সৃষ্টি হয়। ডিজেল-পেট্রোলের দাম বাড়ায় শনিবার দিনভর পরিবহন সংকট ও বিশৃঙ্খলার পর রাতে বাসের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। এখনো মূল্য বৃদ্ধির তালিকা টাঙানো হয়নি বাস কাউন্টারগুলোতে। এতে ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে কোম্পানিগুলো।
গতকাল রবিবার থেকে এ ভাড়া কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও শনিবার রাত থেকেই এ ভাড়া কার্যকর করেছেন বাস মালিকরা। যদিও তেলের দাম বাড়ার কারণে শনিবার অধিকাংশ রুটের গণপরিবহন রাস্তায় নামেনি। তবে গতকাল রাস্তায় স্বাভাবিক দিনের মতোই চলছে গণপরিবহন। যদিও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
নতুন ভাড়া হিসেবে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ ন্যূনতম ১০ টাকা ভাড়া। কিন্তু মিরপুর ও গাবতলী রুটের বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫ টাকা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েক জন যাত্রী। যাত্রীরা জানান, ফার্মগেট থেকে শাহবাগের দূরত্ব কত? সরকার সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করেছেন ১০ টাকা। অথচ বাসের লোকজন ভাড়া নিয়েছে ১৫ টাকা করে। এই সামান্য দূরত্বের ভাড়া কি ১৫ টাকা?
নীলক্ষেত থেকে আসাদগেট সাভার পরিবহনের ভাড়া ছিল ১০ টাকা। বর্তমান বর্ধিত ভাড়ায় সর্বোচ্চ ১৫ টাকা নেওয়ার কথা। অথচ যাত্রীদের কাছে ২০ টাকা করে ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এই বাসের কয়েক জন যাত্রী। সাভার পরিবহনের চালক রহমান ও সহকারী মিলন বলেন, ‘আগেও ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, যাত্রীরা দিত ১০ টাকা। এখন তেলের দাম বাড়িয়েছে, তাই ভাড়া ৫ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা নিচ্ছি। আমরা কী করব? দিন শেষে মালিককে টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার পর যা থাকে, তাতে আমাদেরও সংসার চলে না।’
রাজধানীর সায়েদাবাদের বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে একেক কাউন্টারে টিকিটের দাম একেক রকম। প্রতি টিকিটে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। অনেক যাত্রী আবার বাস ভাড়া বৃদ্ধির খবর জানতেন না, এজন্য তারা পড়েছেন বিপাকে।
শ্যামলী কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নন-এসি বাসের টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে ৬৫০ টাকা। আগে এই টিকিটের দাম ছিল ৫৮০ টাকা। এসি বাসের টিকিটের দাম ছিল ৮০০ টাকা, আজ সেটি নেওয়া হচ্ছে ৯০০ টাকা। এই বাসে ঢাকা থেকে কক্সবাজার নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল ৯০০ টাকা, নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার টাকা। এসি বাসের ভাড়া ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা, আজ নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
ঢাকা থেকে সিলেট নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল ৫৭০ টাকা, গতকাল সকাল থেকে নেওয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ছিল ৭০০ টাকা, নেওয়া হচ্ছে ৮০০ টাকা।
হানিফ এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নন-এসি বাসের ৫৮০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা। কক্সবাজারের ৯০০ টাকার টিকিট এক হাজার টাকা এবং সিলেটের ৫৭০ টাকার টিকিট নেওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা।
কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একেক বাসে একেক ভাড়া। সরকারিভাবে এখনো ভাড়ার চার্ট করা হয়নি। সেটি হয়ে গেলে সবার কাছে চার্ট চলে যাবে, আমরাও সে অনুযায়ী ভাড়া নেব।’
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য গতকাল সকালে ইউনিক পরিবহনের সায়েদাবাদ কাউন্টারে আসেন কলেজ শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন। তেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, জানা ছিল না তার।
ইসমাইল বলেন, ‘আমি জানতাম, আগের ভাড়াই আছে, কিন্তু কাউন্টারে এসে দেখি ৫৮০ টাকার ভাড়া ১২০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। বাড়ি যেহেতু যেতেই হবে, অগত্যা বেশি দাম দিয়ে টিকিট কাটতেই হলো।’
তিনি বলেন, এর আগে এক দফা তেলের দাম বাড়িয়ে ৪৮০ টাকার ভাড়া ৫৮০ টাকা করা হয়েছিল। এবার আবার দাম বাড়ানো হলো। মধ্যবিত্তদের কষ্ট হলেও নিম্ন আয়ের মানুষের ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠবে।
সরকারনির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে—এই প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, যাত্রীদের স্বার্থে সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তা মালিকরা মেনে নিয়েছেন। সে হারেই ভাড়া নেওয়ার কথা। বেশি নেওয়ার কথা নয়। তার পরও কোনো বাসের লোকজন বেশি ভাড়া নিয়েছে এমন অভিযোগ পেলে সেই কোম্পানির বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে পেট্রোল পাম্পগুলোতে শনিবার মতো গতকালও বাড়তি চাপ রয়েছে। গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে জ্বালানি সরবরাহকারী কর্মীদের। কিছু ক্ষেত্রে বাগ্বিতণ্ডাও হয়েছে অনেকের সঙ্গে। পরিবাগের মেঘনা মডেল সার্ভিস সেন্টার পেট্রোলিয়াম লিমিটেড স্টেশনে গিয়ে প্রাইভেট কারের লাইন দেখা যায়। স্টেশনের ম্যানেজার আজিজুল ইসলাম বলেন, দাম বাড়ার সিদ্ধান্তের আগে অর্থাৎ রাত ৮টায় তাদের পাম্প বন্ধ হওয়ায় চাপ পড়েনি। তবে গতকালের মতো আজও পাম্প খোলার পর গাড়ির চাপ বেড়েছে।