বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

রাতের বাসে যাত্রীদের ডাকাত আতঙ্ক

আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২২, ০৪:০৪

সারাদেশে রাতের বাসে ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। যাত্রীবেশে বাসে উঠে চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারসহ সকলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনতাই করে নেয় ডাকাত দল। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও এক নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, দিনে ডাকাত দলের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন পেশায় জড়িত থাকে। কেউ গার্মেন্টসে খন্ডকালীন কাজ করে। আবার কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা করে কেউ অটোরিকশা চালায়। এরাই রাতের বেলা হয়ে ওঠে ভয়ংকর। বিপদের কথা হলো, ডাকাতির সময় এখন শুধু যাত্রীদের টাকাপয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় না তারা। ছুরিকাঘাত এমনকি গুলি করতেও দ্বিধা করছে না। ঘটনার শিকার হয়েও থানা-পুলিশে জড়াতে চায় না অনেক ভুক্তভোগী। অন্যদিকে অনেক সময় মামলা নিতেও গড়িমসি করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।

সূত্র মতে, জেলা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের সমন্বয়হীনতার কারণে ভুক্তভোগীরা কোনো ধরনের প্রতিকার পাচ্ছে না। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ক্যাম্প না থাকা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের স্বল্পতার কারণেই বেশিরভাগ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীদের মতে, মহাসড়কে ডাকাতি রুখতে পুলিশকে আরো দায়িত্বের সঙ্গে তৎপরতা বাড়াতে হবে।

টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কটি রাত হলেই মনে হয় ভূতুরে এলাকা। এই সড়কটি বাসে চলাচল করা নারীদের জন্য হয়ে উঠেছে একটি আতঙ্কের সড়ক। পর্যাপ্ত পুলিশি টহল ও সড়ক বাতি না থাকায় অপরাধীরা এই সড়কটিই বেছে নিয়েছেন। গত বছর এই সড়কে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয় এক ছাত্রীকে। এছাড়া এক পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণ করা হয় চলন্ত বাসে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার একই সড়কে ডাকাতিসহ এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহর বলেন, রাতে বাসে ডাকাতির ব্যাপারে সংগঠনকে দোষ দেওয়া যাবেনা। সংগঠন থেকে জোর নির্দেশনা দেওয়া আছে যে যারা রাস্তা থেকে যাত্রী তোলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এটি তদারকির দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের। রাস্তা থেকে যারা যাত্রী উঠায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থায় যেতে হবে। হাইওয়ে পুলিশের চেকপোষ্ট বাড়াতে হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের পর অনেকেই মনে করে জানে বেঁচে গেছি, শুকরিয়া। এ নিয়ে আর কোনো অভিযোগ করবেন না। আমরা বলতে চাই, ছিনতাই কিংবা ডাকাতির শিকার হওয়ার পর কাছের থানায় অভিযোগ করবেন। যদি থানা অভিযোগ না নেয় তাহলে সরাসরি ডিবি কার্যালয়ে চলে আসবেন।

রাতে বাসে ডাকাতির বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা সমসময় যেকোন অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করি। বিশেষ করে আমাদের কাছে যখন কোন অভিযোগ আসে বা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারি তাত্ক্ষণিক সেটার বিরুদ্বে ব্যবস্থা নিতে কাজ করি। তিনি বলেন, ডাকাতি বন্ধেও র‍্যাব সবসময় তৎপর। এর আগেও বাসে ডাকাত দলের কয়েকটা চক্রকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে।

গত বছরের শেষ দিকে মহাসড়কে ডাকাতদের কবল থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন টাঙ্গাইলের আড়াই শ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

গত ১৩ মে রাত ২টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভবেরচর এলাকায় একদল ডাকাত মহাসড়কে গাছ ফেলে রেখে প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নেয়। এই সময় ডাকাতের অস্ত্রের আঘাতে এনামুল (৪০) নামের এক যাত্রী মারাত্মক আহত হন। এর আগের গত ১২ মে রাত আড়াটায় কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন সরকার ঢাকা থেকে কুমিল্লা ফেরার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতের কবলে পড়েন।

আমিরুল ইসলাম নামের এক বাসচালক জানান, রাতের বেলা এই মহাসড়ক দিয়ে বাস চালাতে ভয় করে। কারণ মাঝেমধ্যে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত ১৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে তিনটায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাদানীনগর এলাকায় আল আমিন গার্মেন্টসের সামনে ডাকাতির কবলে পড়েন একজন বিদেশ ফেরত যাত্রী।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ডাকাতদের সঙ্গে মহাসড়কে চলাচলরত কতিপয় পণ্যবাহী গাড়িচালক ও সহকারীর যোগসাজশ রয়েছে। ওইসব পরিবহনকর্মী পণ্য নিয়ে রওনা দেওয়ার আগেই মোবাইল ফোনে ডাকাতদের তথ্য জানিয়ে দেয়।

দেশের পূর্বাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতিতে নতুন কয়েকটি চক্র সক্রিয়। চান্দিনা, ভবেরচর ও সোনারগাঁও ওই তিন এলাকায় ডাকাতি বেশি হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।

ইত্তেফাক/ইআ