'সিটিজেন টক' শীর্ষক আলোচনা সভায় মুক্তপাঠ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম প্রসঙ্গে বক্তারা বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো মুক্তপাঠ। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিনামূল্যে দক্ষতা উন্নয়নের নানা কোর্স করতে পারছেন। এমনকি উদ্যোক্তারাও মুক্তপাঠের প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত সনদপত্র ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে ঋণ সংগ্রহ করছেন।
সোমবার (৮ আগস্ট) বিকেলে এটুআই-এর হিউম্যান ডেভলপমেন্ট মিডিয়া ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে। দৈনিক ইত্তেফাক, সিএনআই ও এক্সিলেন্স বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এটুআই-এর ন্যাশনাল কনসালটেন্ট মেহদী হাসান, বারোভুত লিমিটেডের ডিরেক্টর মারুফা এনিন এবং মুক্তপাঠের শিক্ষার্থী এসহাক শাহীন ভূঁঞা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইত্তেফাক অনলাইনের সহসম্পাদক সৈয়দ তাওসিফ মোনাওয়ার।
এটুআই-এর ন্যাশনাল কনসালটেন্ট মেহদী হাসান বলেন, বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের উদ্ভাবনী বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার বেশকিছু পরিচালিত হচ্ছে এটুআই-এর মাধ্যমে। এরই অংশ হিসেবে আমরা বাংলা ভাষার সর্ববৃহৎ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম মুক্তপাঠ তৈরি করেছি। এখানে ১২ লক্ষ ৬৫ হাজার নিবন্ধিত প্রশিক্ষণার্থী যুক্ত হয়েছেন, ৫০টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ২০০টিরও বেশি কোর্স চালু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পূর্বে সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠাননির্ভর ছিল—এমন অনেক প্রশিক্ষণ মুক্তপাঠ দ্বারা অনলাইনের মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মুক্তপাঠ সবার জন্যই ব্যবহার উপযোগী ও কার্যকর একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। তবে আমরা এটির আরও উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া চালু রেখেছি। অংশগ্রহণকারী বা ব্যবহারকারীদের চাহিদা, মতামত ও প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে কাজ করছি। করোনাকালীন সময়ে বেশ বড় সংখ্যক ব্যবহারকারী আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
বারোভুত লিমিটেডের ডিরেক্টর মারুফা এনিন বলেন, মুক্তপাঠ একটি যুগপোযোগী প্ল্যাটফর্ম। সব বয়সের, সব পেশার মানুষ এখানে কোর্স করে দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারেন। আমি কৃষিখাত নিয়ে কাজ করি। এই খাতে উদ্যোক্তা হতে চাইলে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। এখন ঘরে বসে মুক্তপাঠের মাধ্যমে কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে, তাই আমি মুক্তপাঠের সঙ্গে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় নামার সময় মূলধন প্রয়োজন হয়। অনেকক্ষেত্রেই ঋণ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এখন মুক্তপাঠের সনদপত্র ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যাচ্ছে। মুক্তপাঠে কোনো প্রশিক্ষণ নিলে সেটির বাড়তি মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
মুক্তপাঠের শিক্ষার্থী ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এসহাক শাহীন ভূঁঞা বলেন, আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন অধিকাংশ শিক্ষাউপকরণ আমার জন্য 'ইনঅ্যাকসেসিবল' বা ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ৭ লক্ষ পাঠ্যপুস্তক থাকা সত্ত্বেও এর অল্প কয়েকটিই আমার ব্যবহারযোগ্য ছিল। এছাড়া আমি বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে চেয়েছি। কিন্তু সেধরনের অবকাঠামো না থাকার ফলে আমি একধরনের ঘাটতি অনুভব করছিলাম। মুক্তপাঠের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর প্রাসঙ্গিক অনেক কোর্স খুঁজে পেয়েছি, স্কিল ও প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের বেশকিছু কোর্সও এতে আছে। কিন্তু এতে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আমি বেশকিছু সীমাবদ্ধতা অনুভব করছিলাম। বিষয়টি মুক্তপাঠের কলাকুশলীদের জানানোর পর তারা সেই আঙ্গিকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
এসহাক শাহীন ভূঁঞা আরও বলেন, এখন মুক্তপাঠ আমার জন্য খুব সহজে ব্যবহারযোগ্য একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। আগের চেয়ে ডাইনামিক হয়েছে। এখন আমি এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে যেকোনো কোর্স করে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার সুযোগ পাচ্ছি। মুক্তপাঠে শিশুদের আর্লি-লিটারেসি, স্পোকেন ইংলিশ, এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বেশকিছু ভালো কোর্স রয়েছে। এধরনের কোর্সগুলোতে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি সম্পৃক্ত হলে তা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
সবশেষে মুক্তপাঠ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের আমন্ত্রণ ও এর বহুল প্রচার কামনা করে শেষ হয় সিটিজেন টক-এর এই আলোচনা।