প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোটা মানবজাতির জন্য এক অনুসরণীয় জীবনাদর্শ। তিনি ছিলেন আরবের সবচেয়ে সুন্দর বাচনভঙ্গির অধিকারী। তিনি সবসময় মুচকি হাসি দিয়ে কথা বলতেন। সাহাবায়ে কেরামগণের সাথে মুচকি হাসিতে হুদয়ের গভীরে আসন করে নিতেন। এমনকি তিনি তাদের সাথে অকৃত্রিম রসিকতাও করতেন। তবে তিনি এক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতেন এবং সীমার মধ্যে থাকতেন। তাঁর কৌতুকের মাধ্যমে কাউকে কষ্ট কিংবা নিচু করতেন না। আবার এরকমও করতেন না, যার ফলে সবাই হাসির সীমা অতিক্রম করে। তিনি মিথ্যা বলে হাসানোর চেষ্টাও করতেন না। একবার প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী হযরত আয়েশা (রা.) কে প্রশ্ন করা হলো যে, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কখনো হাস্য-রসিকতা করতেন? মা আয়েশা (রা.) উত্তর দিলেন, ‘ হ্যাঁ, করতেন তবে যত্রতত্র নয়। স্থান-কাল- পাত্র ও সম্বোর্ধিত ব্যক্তিটির যোগ্যতানুসারে করতেন।’
(শামায়েলে তিরমিজি) তাঁর কিছু রসিকতার উদাহরণ দেওয়া যাক। ১. হযরত আনাস (রা.) এর বর্ণনায় পাওয়া যায়, একবার জনৈক ব্যক্তি মহানবি হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে সওয়ার উপযোগী একটা উটের জন্য আবেদন করলো। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাকে উটের একটা বাচ্চা দান করবো। লোকটি হতাশ হয়ে বললো, হুজুর, আমি উটের বাচ্চা নিয়ে কী করবো? প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, প্রত্যেক উটই কোন না কোন উটনীর বাচ্চা হয়ে থাকে। (শামায়েলে তিরিমিজি-১৭৭)
২. অন্যের রসিকতাকেও সহজভাবে গ্রহণ করতেন মহানবি (স.)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবীদের সাথে বসে খেজুর খাচ্ছিলেন। হযরত আলীও ওই মজলিশে বসে খেজুর খাচ্ছিলেন। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ক’জন সাহাবী খেজুরের বীচি গুলো হযরত আলী (রা.) এর সামনে রেখে দিচ্ছেন। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসিকতা করে বললেন, বীচি দেখে অনুমান করা যায়, কে সবচেয়ে বেশি খেজুর খেয়েছে। তখন হযরত আলী (রা.) হেসে বললেন, এতে এটাও অনুমান করা যায় কোন মানুষটি বীচি বাদ দিয়ে খেজুর খেয়েছে আর কোন মানুষটি বীচিসহ খেজুর খেয়েছে। (তিরমিজি, আবু দাউদ)
৩. একবার এক বৃদ্ধা মহিলা সাহাবী রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল আপনি আমার জন্য একটু দোয়া করবেন যেনো আমি জান্নাতবাসিনী হই। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসিকতা করে তাকে বললেন, ‘কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে যেতে পারবে না” বৃদ্ধা মহিলাটি একথা শুনে কান্না করতে করতে চলে যাচ্ছিল। এমন সময় রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অবস্থা দেখে বললেন, জান্নাতে কেউ বৃদ্ধা অবস্থায় প্রবেশ করবেনা। বরং আল্লাহ সবাইকে পূর্ণ যৌবন দান করে প্রবেশ করাবেন। একথা শুনে বৃদ্ধা মহিলা আশ্বস্ত হয়ে এক গাল হেসে চলে গেলেন। (শামায়েলে তিরমিজি)
৪. একবার এক মহিলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে হাজির হলে তিনি তার স্বামীর নাম জানতে চাইলেন। মেয়ে লোকটি স্বামীর নাম বললো। হুজুর (স.) তখন চিনতে পেরেছেন এমন ভঙ্গিমায় বললেন, ও, ঐ যে সাদা চোখ ওয়ালা লোকটা, তাই না? মহিলাটি বাড়িতে ফিরে তার স্বামীর চোখ দুটো মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো। স্বামী বললো, তোমার কী হয়েছে? এভাবে থাকিয়ে আছো কেনো? মহিলাটি বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি আপনার নাম বললাম। তিনি বললেন, ‘ও, ঐ লোকটি! যার চোখে সাদা রং রয়েছে’। স্বামী বললো, আমার চোখে কি সাদা রং নেই? কালোর চেয়ে সাদা অংশ কি বেশি নয়?’ (আবু দাউদ)
৫. ছোট্ট শিশু আবু উমায়েরের পালিত বুলবুলিটি মরে গেলে সে ভীষণ মর্মাহত হয়। মন খারাপ করে যখন উমায়ের বিষণ্ণ মনে বসে আছে তখন আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হাসানোর জন্য ছন্দ মিলিয়ে বললেন, ‘ইয়া আবা-উমায়ের, মা ফাআলান নুগায়ের?’ হে আবু উমায়ের, এ কী করল তোমার নুগায়ের? (বুখারি)
লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়