শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রোহিঙ্গা ক্যাম্প যেন অপরাধের স্বর্গরাজ্য

আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২, ০৫:০০

রোহিঙ্গা ক্যাম্প যেন অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অস্ত্র ও মাদকের কারবার, মানবপাচার, কথায় কথায় খুন, অপহরণ করে মুক্তিপণ, ডাকাতি, চুরি, আধিপত্য বিস্তার, সাইবার ক্রাইম, যৌন নির্যাতন, অবৈধ সিম বাণিজ্য, স্হানীয়দের জমি দখল, হুন্ডি, জাল টাকার কারবার, ধর্ষণ, পুলিশের ওপর হামলাসহ হেন কোনো অপরাধ নেই যা রোহিঙ্গারা করছে না। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। তাই ড্রোন ক্যামেরা এবং ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। গত পাঁচ বছরে ১০১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মে মাসে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজারে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ২৭৯ জন প্রাণ হারিয়েছে।

এদের মধ্যে রোহিঙ্গা ১০৯ জন। নিহত রোহিঙ্গাদের মধ্যে তিন জন নারীও ছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই রোহিঙ্গা নেতা নিহতের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। বৃহস্পতিবার ভোরে ক্যাম্পের বিভিন্ন স্হানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ৩২টি শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ অপরাধী কর্মকাণ্ডে জড়িত। ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে উঠে আসছে রোহিঙ্গাদের নিত্যনতুন এ অপরাধের চিত্র। রোহিঙ্গারা শুধু নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি নয়, তাদের হামলায় কয়েক জন বাংলাদেশিও নিহত হয়েছে। পাশাপাশি অপহরণের শিকারও হচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, উখিয়া ও টেকনাফে এখন রোহিঙ্গারাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। বাংলাদেশিরা সেখানে এখন সংখ্যালঘু। সে কারণেই শরণার্থী ক্যাম্পের পরিস্হিতি কত দিন নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে সে উদ্বেগ রয়েই যাচ্ছে স্হানীয়দের মাঝে।

সর্বশেষ গত দুই-আড়াই মাসে মিয়ানমার ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) দুই নেতাসহ অন্তত পাঁচ জন খুন হয়েছে। এদের মধ্যে গত মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা শিবিরে নুরুল আমিন নামের এক রোহিঙ্গা যুবক খুন হয়। জানা গেছে, ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনের আই ব্লকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ও তাদের অধিকার আদায়ের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে নিহতের পরিবারের সদস্যরা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসাকে দায়ী করে আসছিল। এরপর ২২ অক্টোবর ১৮ নম্বর ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গুলি করে ছয় জন ছাত্র-শিক্ষককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটলেও তা ঠেকানো যাচ্ছে না।

এমনকি রোহিঙ্গা শিবিরে আরসার উপস্হিতির বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এলেও এত দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়। সর্বশেষ ১৩ জুন পুলিশের দেওয়া রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে শরণার্থী শিবিরে আরসা সদস্যদের উপস্হিতি স্বীকার করে পুলিশ।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ক্যাম্পগুলোতে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কারণে বিপুল পরিমাণ বনভূমি ও পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তারা গাছ কাটার মাধ্যমে বনভূমি হ্রাস এবং এলাকার পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর ৪৫ হাজারের বেশি শিশু জন্মগ্রহণ করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

ইত্তেফাক/এএইচপি