শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

পরম্পরা 

আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২, ২৩:০১

মিসেস নাহার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, চলমান জীবনের আসন্ন কালবৈশাখী ঝড়ের রূপটি নিয়ে ভাবছে।

স্বামীর মৃত্যুর এক বছর যেতে না যেতেই একমাত্র ছেলের রূপ পরিবর্তন ঘটে। অবশ্য ছেলের রূপ পরিবর্তনে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে তার পুত্রবধূ। ছেলে আবদার ধরেছে, নির্মাণাধীন বাড়ির নাহারের অংশটিও ছেলেকে লিখে দিতে হবে। এ নিয়ে গত রাতে ছেলের সঙ্গে নাহারের তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়েছে। ছেলের অঢেল থাকার পরও তাকে বোঝানো যাচ্ছে না। মেয়েরাও তো নাহারের অংশের হকদার।

বাঁশরির সুরে বেজে ওঠে কলিংবেল। ঠিকা মাস্টারি শেষে আগমনের বার্তা জানায় পুত্রবধূ। সে নিজের ঘরে না ঢুকেই মোরগের মতো বাগ দিয়ে ওঠে।

—ইমন খেয়েছে?

—না।

—তা খাওয়াবে কেন? বড় মেয়ের ঘরের নাতিদের তো আদর করে খাওয়াও।

শুরু হয় বউ-শাশুড়ির মারমুখী ঝগড়া। হাত-পা নেড়ে পুত্রবধূ যখন মাতালের মতো অশালীন ভাষা প্রয়োগে মগ্ন, তখন ছোট মেয়েটি রাগত কণ্ঠে প্রতিবাদ করে ওঠে।

—সীমা লঙ্ঘন কারো না ভাবি।

—তুই তো সীমা লঙ্ঘন করিস না। ভাবির সঙ্গে কীভাবে কথা কইতে হয়, শিখিস নাই? তা শিখবি ক্যা? সারা দিন তো বারো জনের সাথে ফষ্টি-নষ্টি করে বেড়াস।

—যে বলে সে করে।

প্রতি উত্তরে, উত্তেজিত হয়ে সীমাহীন অশ্লীল শব্দের ব্যবহারে নিজের ক্ষমতাটাকে জাহির করতে কৃপণতা করে না পুত্রবধূ। পরিবেশটা চৈত্রের দুপুরের মতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কাচের বাসনপত্র ভাঙার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে ননদ-ভাবি।

—তোরা এখনই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি। শোন, তোর ছেলে কী বলে।

মোবাইলের লাউডস্পিকার বাড়িয়ে দেয় পারিবারিক সিইও পদমর্যাদার পুত্রবধূ। সেখান থেকে অধস্তন এক্সিকিউটিভের ঝাঁজালো কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।

—দুটোকে ঘাড় ধরে...।

লাউডস্পিকারে ছেলের কথা শুনে থ মেরে যায় নাহার।

পরদিনই ভাড়া বাসায় ওঠে। রাতে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে রাতের আকাশের দিকে তাকায়। তারাদের মিটিমিটি আলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার গাল বেয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। একসময় তা বানের জলের মতো বাড়তে থাকে। তার ছেলের অন্তর সিমারের মতো মায়াদয়াহীন হলো কী করে?

নাহার নিজের দিকে তাকায়। নিজের অন্তরে ডোবে! তার শাশুড়ির জন্য কিছু বিষ কি সেখানে জমা ছিল না? নাহার কি বিষের পরম্পরার শিকার?

[গফরগাঁও, ময়মনসিংহ]

ইত্তেফাক/এএইচপি
 
unib