শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নারীরা হয়রানি ও পর্নোগ্রাফির শিকার, পুরুষরা হ্যাকিংয়ের : সিসিএর গবেষণা

আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২২, ০০:৩৭

সাইবার জগতে প্রতিনিয়ত ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার, পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও প্রাণনাশের হুমকির ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে নারীরা সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধের শিকার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়রানি ও পর্নোগ্রাফির শিকার হচ্ছে তারা। অন্য দিকে পুরুষরা বেশি শিকার হ্যাকিংয়ের। সাইবার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশই বুলিংয়ের শিকার। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ) ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২২’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন গবেষণা দলের প্রধান ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মনিরা নাজমী জাহান।

মনিরা নাজমী জাহান বলেন, হয়রানির শিকার ৭৩ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যক্তিই আইনের আশ্রয় নেয় না। আইনের আশ্রয় নেওয়া ভুক্তভোগীদের মাত্র ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ আইনি সেবার প্রতি সন্েতাষ প্রকাশ করেছেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, লোকলজ্জার ভয়সহ বিভিন্ন কারণে অপরাধের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা কোথাও অভিযোগ করেন না। সার্বিক পরিস্থিতিতে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ আটটি সুপারিশ তুলে ধরা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে। জরিপে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২ মার্চ পর্যন্ত ব্যক্তি পর্যায়ে ভুক্তভোগী ১৯৯ জনকে ১৮টি প্রশ্ন করা হয়। সেই মতামতের ভিত্তিতে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী মুস্তাফিজ।

আলোচকদের মধ্যে ছিলেন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির প্রেসিডেন্ট মো. ইমদাদুল হক, প্রযুক্তিবিদদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সুলতানা ইশরাত জাহান।

কাজী মুস্তাফিজ বলেন, গবেষণায় সাক্ষাত্কার নেওয়ার সময় ভুক্তভোগীরা মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। ভার্চুয়াল জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে আর বেশি কিছু করার থাকে না। মূলত সাইবার অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই সচেতন হওয়া জরুরি। আইএসপিএবির পরিচালক সাকিফ আহমেদ বলেন, দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেশির ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ভুক্তভোগী। শিশুদের পরিস্থিতি আরো আশঙ্কাজনক। একটা ইন্টারনেট সংযোগ একই সময়ে পরিবারের ১৩-১৪ জন্য ব্যক্তি ব্যবহার করেন। কিন্তু সবাই ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন নন। এ ধরনের অপরাধ থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। দেশে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার অবৈধ ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীদের লগ সংরক্ষণ করে না, এটা জরুরি।

মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা শুধু ভুক্তভোগীই নয়, অপরাধীরাও বেশির ভাগ এই বয়সী। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যেসব সাইবার অপরাধ ঘটে, সেসবের তথ্য পাওয়া যায় না। বর্তমানে গুজবও একটা মারাত্মক বিষয়। আন্তর্জাতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকাশিত সংবাদের ৮০ শতাংশ অসত্য। এজন্য সচেতনতামূলক কাজের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সুলতানা ইশরাত জাহান বলেন, অনেকে সাইবার অপরাধের শিকার হয়েও অভিযোগ করেন না। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনকে আইন মেনেই কাজ করতে হয়। তাই আইনি প্রতিকারের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। অপরাধের শিকার হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করতে হবে। তাহলে আইনি প্রতিকার মিলবে।

জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই সাইবার বুলিংয়ের শিকার। এর মধ্যে রয়েছে ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার, পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার এবং অনলাইনে-ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে মানসিক হয়রানি। এবারের জরিপে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া ভুক্তভোগী কিছুটা বেড়ে ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ হয়েছে, যা গতবারের প্রতিবেদনে ছিল ৫০ দশমিক ১৬ শতাংশ। দেশে সাইবার অপরাধের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং বা তথ্য চুরি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো এবং অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পরিলক্ষিত হয়েছে, নারী ও পুরুষের মধ্যে সাইবার অপরাধে আক্রান্ত হওয়ার মাত্রায় ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষের তুলনায় নারীরা সাইবার অপরাধের শিকার বেশি হয়েছেন। সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগীদের জেন্ডারভিত্তিক পার্থক্য করলে দেখা যায়, ভুক্তভোগীদের মধ্যে পুরুষ ৪৩ দশমিক ২২ শতাংশ এবং নারী ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়া পুরুষের তুলনায় নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানি এবং পর্নোগ্রাফির শিকার বেশি হয়েছেন। অন্য দিকে নারীদের তুলনায় পুরুষরা মোবাইল ব্যাংকিং/এটিএম কার্ড হ্যাকিংয়ের শিকার বেশি হয়েছেন এবং অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

ইত্তেফাক/ইআ