শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘বই প্রকাশে লেখকের প্রস্ত্ততি’ নেয়ার বই 

আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৩:৫৯

বদিউদ্দিন নাজির বাংলাদেশের অগ্রগণ্য পুস্তক-প্রকাশনা বিশেষজ্ঞ। কর্মজীবনের প্রথম ভাগে জাতীয় গ্রম্হকেন্দ্রে কর্মরত থাকা কাল থেকেই গ্রম্হ উন্নয়নে তাঁর সক্রিয়তা ও অনুশীলনের পরিচয় আমাদের বৌদ্ধিক সমাজে অনুভূত। তা ছাড়া, এই বিষয়ে বাংলাদেশে তিনিই সম্ভবত প্রথম বিদ্যায়তনিক সনদধারী বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। অবশ্য অনুশীলনগত দিক থেকে এই ক্ষেত্রে তাঁরও আগের ও পরের কয়েকজন প্রাজ্ঞ বিশেষজ্ঞের কথাও আমাদের নিশ্চয়ই মনে রাখতে হবে। তবে হয়তো এ কথা বলা অতু্যক্তি হবে না যে, উত্কর্ষমণ্ডিত গ্রম্হসংস্কৃতি মেনে চলা বাংলাদেশের অগ্রগণ্য পুস্তক-প্রকাশনা সংস্হা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে পাবলিশিং এডিটরের দায়িত্ব পালন করা বদিউদ্দিন নাজির বই-প্রকাশনা বিষয়ে এতটাই অনুশীলিত ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি যে তাঁর সঙ্গে তুলনীয় প্রায় কেউ বাংলাদেশে নেই! নিজের সুদীর্ঘ কর্ম অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি একটা বই লিখেছেন এমন খবর নিশ্চয়ই আমাদের কাছে সুসংবাদ।

বদিউদ্দিন নাজির কয়েক বছর ধরে ফেসবুকেও সচল থাকায় তাঁর এই সাম্প্রতিক সক্রিয়তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা সম্ভব হয়ে উঠেছিল আমার পক্ষে। সেই সুবাদে তাঁর রচমান বইটি নিয়ে টুকটাক কথা বিনিময়ও হতো। আনন্দিত বোধ করতাম যে, একটা যথার্থ দরকারি বই বাংলাভাষায় বের হতে যাচ্ছে! ‘বই প্রকাশে লেখকের প্রস্ত্ততি’ নামের সে বইটি মাসখানেক আগে প্রকাশিত হয়েছে। বদিউদ্দিন নাজিরের সঙ্গে পুস্তক-প্রকাশনার খুঁটিনাটি নিয়ে সামান্য দু-একবার যা কথা হয়েছে তা উল্লেখ করবার মতো কিছু নয়। তা সত্ত্বেও দেখলাম ‘কৃতজ্ঞতা স্বীকার’ পর্বে আমার নামও উল্লেখ করেছেন তিনি। বই প্রকাশে এটা তাঁর পেশাদারি-সংস্কৃতিরই প্রকাশ।

আয়তনে বইটি ৩৩১ পৃষ্ঠার, আকারে ১/৮ ডিমাইয়ের। প্রাথমিক চোখ বোলানো পাঠেই আমি আনন্দিত। কারণ পাতা ওলটাতে ওলটাতে অনুভব করেছি এই বিষয়ে যথার্থ একটি পেশাদারি বই লেখা হলো। যে কোনো বই লেখার আগে লেখককে কী কী বিষয়ে সচেতন থেকে প্রস্ত্তত হতে হবে তার প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্য এই বই তো আমার কাছে অবশ্যপাঠ্য মনে হয়েছে!

কীভাবে একজন লেখক তাঁর প্রকাশিতব্য বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করবেন, পাণ্ডুলিপি তৈরির জন্য কী কী বিষয়ে ভাবনার অগ্রাধিকার থাকা উচিত, লেখক-প্রকাশক চুক্তিতে কোন কোন শর্তের ব্যাপার বিবেচনা অবশ্যম্ভাবী, কোন ধরনের প্রকাশকের কাছে কোন ধরনের পাণ্ডুলিপি নিয়ে যাওয়া ভালো, সেল্ফ এডিটিং কীভাবে ও কেন করতে হবে, ভালোভাবে সেল্ফ এডিটং করা থাকলে প্রকাশকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কী সুবিধা, ইনডেক্সিং বা নির্ঘণ্ট কীভাবে করতে হয়, কেনইবা ইনডেক্সিং একটা বইয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কপিরাইট ও অনুমতিপত্রের জন্য কী কী বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরি, থিসিস থেকে বইয়ে রূপ দিতে কোন কোন দিকে নজর দিতে হয়—এইরকম জরুরি অনেকগুলো জানার বিষয় নিয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় বইটি লিখেছেন বদিউদ্দিন নাজির।

বইটির প্রকাশক কথাপ্রকাশের জসিম উদ্দিনও অনেক যত্ন ও পেশাদারিত্বর সঙ্গে বইটি প্রকাশ করেছেন।

যাঁরা প্রকৃত অর্থেই লেখক হতে চান, অথবা লিখেও ফেলেছেন কয়েকশো পৃষ্ঠা কিন্তু বই প্রকাশের জন্য এখনো পাণ্ডুলিপি প্রস্ত্তত করেননি, তাঁরা পাণ্ডুলিপি তৈরি করার আগে এই বই পড়ে নিলে উপকৃত হবেন।

যাঁরা পুস্তক-প্রকাশনা ও মুদ্রণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন তাঁদের তো সার্বক্ষণিক সঙ্গী হবার কথা ‘বই প্রকাশে লেখকের প্রস্ত্ততি’ বইটি। তা ছাড়া, বাংলাদেশে পুস্তক-প্রকাশনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত ব্যক্তিমাত্রেরই কাজে আসবে বইটি।

যাঁরা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ বইটি তাঁদেরও সমাদর পাবার কথা। এই বইয়ের লেখকের ভাবনার সঙ্গে এই ধরনের কাজে যুক্ত অন্যরা তাঁদের প্রত্যক্ষ কর্ম অভিজ্ঞতাকে বারংবার মিলিয়ে দেখে তাঁদের কোনো কোনো অস্পষ্ট বিবেচনাকে পরিষ্কার করে নিতে পারবেন।

বাংলাদেশের পুস্তক-প্রকাশনা ক্ষেত্রের বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতকে বিবেচনা করে লেখা হয়েছে বলে বই-প্রকাশনা সংশ্লিষ্টদের হাতের কাছে সর্বক্ষণ রাখবার মতো বই বদিউদ্দিন নাজিরের লেখা ‘বই প্রকাশে লেখকের প্রস্ত্ততি’। বাংলাদেশের পুস্তক-প্রকাশনা ক্ষেত্রে এই বইটির যথার্থ ব্যবহার এই ক্ষেত্রের উত্কর্ষ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলেই মনে করি!

বই প্রকাশে লেখকের প্রস্ত্ততি

বদিউদ্দিন নাজির

প্রচ্ছদ: রফিকুন নবী

প্রকাশক: কথাপ্রকাশ

মূল্য: ৫০০ টাকা

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন