শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অবৈধ কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ!

  • পুরান ঢাকায় ১৯২৪ কেমিক্যাল কারখানা চিহ্নিত
  • এ বছরই ৫০০ কারখানা সরানোর ঘোষণা
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৭:৩২

নেই ট্রেড লাইসেন্স, নেই বাণিজ্য করার অনুমতিও। ভবনেরও নেই কোনো বৈধতা। তারপরও পুরান ঢাকার এসব অবৈধ কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে লেগেছে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ! কীভাবে এসব সংযোগ লেগেছে? জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘আমরা জানি না। অন্য সংস্হাগুলোর তো এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা উচিত? তারা বাণিজ্য অনুমতি ছাড়া কীভাবে এখানে গ্যাস-সংযোগ পাচ্ছে? আমরা জানি যে, ঢাকা শহরে বিভিন্নভাবে অবৈধ উপায়ে গ্যাস-সংযোগ পেয়ে যায়। এটাও হয়তো-বা খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে, অবৈধভাবে এই সংযোগ নিয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পুরান ঢাকায় চিরুনি অভিযান চালিয়েছে। সেখানে তারা ১ হাজার ৯২৪টি কেমিক্যাল ফ্যাক্টরির সন্ধান পেয়েছে। এর অধিকাংশই অবৈধ। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্হা নেওয়া হয়নি। কেন এসব ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেওয়া যাচ্ছে না? জানতে চাইলে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘আমরা কিন্তু সেই দীর্ঘ ২০১৮ সালের পর থেকে এখানে কোনো ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছি না। তারপরেও এখানে অবৈধভাবে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে কারখানা করেছে, রেস্তোরাঁ করেছে। এগুলো কিন্তু আসলে সবই অনিয়মতান্ত্রিক ও বেআইনি।’

এসব অবৈধ ফ্যাক্টরি কী এভাবেই থাকবে? জবাবে মেয়র ব্যারিস্টার তাপস বলেন, এ বছরের মধ্যে ৫০০টি কারখানা ও গুদাম স্হানান্তর করা হবে এমন তথ্য আমাদের জানানো হয়েছে। রাসায়নিক কারখানা ও গুদামঘরগুলোর স্হানান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলে ৫০০টির মতো গুদামঘর, কারখানা স্হানান্তরের প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে এবং সেটা এ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এগুলোর সম্পূর্ণরূপে স্হানান্তর প্রক্রিয়া না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পাব না।’

সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডে ছয় জনের মৃতু্যর পর আবারও আলোচনায় এসেছে কেমিক্যাল গোডাউন। পুরান ঢাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক আবাসিক ভবনের নিচতলার পার্কিং স্পেস ব্যবহূত হচ্ছে রাসায়নিক গুদাম হিসেবে। কিছু বাড়িতে রাসায়নিক পণ্যের কারখানাও আছে। প্রকাশ্যে এসব গুদাম থেকে কেমিক্যাল আনা নেওয়া করছে ব্যবসায়ীরা। সবার চোখের সামনে এই ঘটনাগুলো ঘটলেও দেখার কেউ নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেমিক্যাল কারখানা সরাতে আমরা বারবার প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে চিঠি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে জনসচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখান থেকে সরছেন না। কিছুদিন আগেও বেশকিছু কারখানার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। এরপরও তারা অবৈধভাবেই ব্যবসা চালাচ্ছেন।

জানা গেছে, ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ঢাকা মহানগরের আবাসিক এলাকা থেকে অবৈধ রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলো কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ৩ জুন শিল্পসচিব বলেছিলেন, ‘কেমিক্যাল পল্লিতে সাততলা ১৭টি ভবন তৈরি করে গুদাম সরানো হবে।’ পরের বছর ২ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জে ২০ একর জায়গায় পল্লি স্হাপন করার কথা বলেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জে বিসিক শিল্পনগরীর পাশে কেমিক্যাল ব্যবসায়ী, রং ব্যবসায়ী ও ছাপাখানার মালিকদের ১০ ও ১৫ কাঠা করে জমি দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। রং ব্যবসায়ী ও ছাপাখানার মালিকরা এই জমি নিলেও রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা কোন জমি নেননি। ফলে তাদের জন্য কোন স্হাপনা সেখানে গড়ে উঠেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরান ঢাকায় আগুনের আঁচ পেলেই জ্বলে উঠে ২৯ ধরনের কেমিক্যাল। পুরান ঢাকায় ২ হাজার ব্যবসায়ী কেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আট শতাধিক ধরনের কেমিক্যাল বিক্রি করেন তারা। আর এসব কেমিক্যাল গোডাউনে মুজত রাখা হয়। এসব গোডাউনের অনেকগুলোতেই রয়েছে সোডিয়াম আনহাইড্রোজ, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোপাইল ও টলুইনের মতো ২৯ ধরনের কেমিক্যাল। যেগুলো আগুনের আঁচ পেলেই ভয়াবহ ধরনের অগ্নিকাণ্ড তৈরি করতে পারে। 

ইত্তেফাক/জেডএইচডি