আবুল কালাম আযাদ রচিত ‘বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবৃত্ত’ বইটিতে মানব সভ্যতার উষালগ্নে পুলিশের উৎপত্তিগত অর্থ অন্বেষণ ও এর বিকাশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সুশীল ও সজ্জনের স্বাধীনতা রক্ষা, অসহায় ও নিপীড়িতের অধিকার ও সম্পদ হরণে তস্করের প্রতিরোধ, দুষ্টের দমন, পাপাচার নিবারণ করাই এই বাহিনীর মূল উদ্দেশ্য। তারপরও পুলিশের ভূমিকায় সেবা প্রত্যাশীর তুষ্টি অর্জন এক দুষ্প্রাপ্য বিষয়। নানা সমালোচনা, রাষ্ট্রযন্ত্রের যাঁতাকল, জনতার বিচারে শাসকের ‘পোষা লাঠিয়াল’, নিশুতিরাতে দুষ্কৃতি ও কুকুরের সহচর, নির্মমতার প্রতীক অথবা ‘ঠোলা’ যেভাবেই তাচ্ছিল্য করা হোক না কেন; পুলিশ যে রাষ্ট্রের একটি বড় অপরিহার্য অঙ্গ তা আজ সর্বজনস্বীকৃত। তাই আলোচনা-সমালোচনা যা-ই করা হোক না কেন, তারা আছে বলেই এখনো সমাজ কাঠামোটা টিকে আছে। অন্যথায় এ সমাজ একেবারে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে চলে যেত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ আছে বলেই সমাজে মানুষ নিরাপত্তার চাদরে বাস করতে পারে। অবশ্য এর বিপরীতে যে কোনো নেতিবাচক কথা নেই তা কিন্তু নয়। তবে দু’চারটে কিংবা তারও বেশি উদাহরণকে টেনে নিয়ে গোটা বাহিনীকে দোষারোপ করা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা শেষ পর্যন্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষ কিংবা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় না বলে এর সুরাহা হয় না। তবে আমরা সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে চাই। পুলিশবাহিনীর কর্তব্যকর্ম আছে বলেই আমরা সাধারণ মানুষ আজ রাস্তাঘাটে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছি। ঠিক উলটোভাবে বলা যায়, তাঁরা যদি রাতে অতন্দ্র প্রহরীর মতো জেগে না থাকতেন তাহলে আমাদের সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যেত। কেউ কেউ হয়তো বলবেন, এটা তাঁদের ডিউটি, সরকার তাঁদের এজন্যই সাধারণ মানুষের করের টাকায় পুষছে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, যদি সবাই তাঁদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতেন তাহলে এ সমাজে এত অন্যায়-অবিচার হতো না।
লেখক তাঁর বইটিতে পুলিশের নানা বিষয় এভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন একটা সমাজ বিনির্মাণে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি এই বাহিনীরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় পুলিশের ক্রমবিকাশ তিনি অত্যন্ত নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। সে কারণে বইটি ছাত্র-শিক্ষক, গবেষক-সমালোচক, পুলিশ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য, আগামীদিনে যারা পুলিশ সংস্কারে ভূমিকা রাখবেন কিংবা পুলিশ পরিচালনা করবেন তাঁদের সকলের কাছেই এটি একটি বিশ্লেষণধর্মী গ্রম্হ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।