শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আবার হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

  • নেপথ্যে বায়রার দুই সাবেক সভাপতি
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪৫

বহু চেষ্টা-তদবিরের পর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার চালু হলেও একটি অসাধু চক্রের কারণে তা আবার হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে। বাংলাদেশের যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির কারণে এ শ্রমবাজার বন্ধ হয় তাদের অনৈতিক প্রচেষ্টা ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ান সরকারের সামনে এসেছে।

প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার সাবেক দুই সভাপতি একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে আবার কাজ পাওয়ার জন্য মালয়েশিয়ান পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এছাড়া মালয়েশিয়ান জোট সরকারের একটি শরিক দলের প্রধানকে মোট অঙ্কের টাকা নিয়ে ঐ দুই জন সাবেক নেতা সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলোর নাম সুপারিশ করেছে। অন্যদিকে বায়রার সাবেক সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক ও সাবেক মহাসচিব রিয়াজুল ইসলাম মালয়েশিয়ার জহুর বাহারু প্রদেশের সুলতানের সঙ্গেও দেখা করেছেন।

উল্লেখ্য, অনেক সময় অপেক্ষার পর ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়েছে। এজন্য মালয়েশিয়ান সরকার বাংলাদেশের মোট ২৫টি এজেন্সি এবং ৫০০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে লোক পাঠানোর অনুমতি দেয়। ইতিমধ্যে নতুন করে ৫৩ জন বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ান সরকার রিক্রুটিং এজেন্সি অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ করার পর এখন আবার বিতর্কিতরা নতুন করে তদবির শুরু করে দিয়েছে। শুধু কর্মী পাঠানোই নয়, তারা বাছাইকৃত কর্মীদের স্বাস্হ্য পরীক্ষার দায়িত্বও নিতে চায়। এ চক্রের প্রধান বাংলাদেশের একটি শীর্ষ আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। ঢাকায় তার পাঁচতারকা মানের দুটি হোটেলও রয়েছে। অন্য জন রিক্রুটিং এজেন্সি ছাড়াও স্পিনিং খাতের ব্যবসায়ী। আলোচ্য খাতের ব্যবসায়ীদের মতে, বিতর্কিত এসব এজেন্সির মালিকরা ইতিমধ্যে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে মালয়েশিয়া সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন। তাদের নিয়ে তদবির করছেন মালয়েশিয়ান পার্লামেন্টের দুই জন সদস্য—যারা অসাধু চক্র নিয়ে তদবির করার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়েছেন। বিষয়টি মালয়েশিয়ান সরকারের কাছে পরিষ্কার হওয়ায় বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে।

ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে জানা গছে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি বিন ইয়াকুবের কাছে চিঠি দিয়েছেন মালয়েশিয়ান পার্লামেন্ট সদস্য মোহাম্মদ নিজার বিন জাকারিয়া ও হাজি মোহাম্মদ সেলিম বিন শরীফ। মোহাম্মদ নিজার তার চিঠিতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম উল্লেখ করেন। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার জহুর বাহারু প্রদেশের সুলতান ইব্রাহিম ইসমাইল ইবনে আলমারহুম সুলতান ইস্কান্দারের কাছেও তদবির করেছে বাংলাদেশের দুটি এজেন্সির মালিক। তারা মালয়েশিয়ান সরকারের অনুমোদিত ২৫টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম যুক্ত করার জন্য সুলতানকে অনুরোধ করেছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং মানবসম্পদ মন্ত্রীকে বলার জন্য তার সুলতানকে অনুরোধ করেন। মালয়েশিয়ান সরকার বাংলাদেশের এসব বিতর্কিত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের দৌড়ঝাঁপ ভালোভাবে নেয়নি বলে জানান। প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বায়রার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি অসাধু চক্র সংগঠনের সদস্যদের বিভ্রান্ত করার জন্য সাধারণ সদস্যদের মধ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলছে, ‘আমরা নির্বাচিত হলে সবার জন্য মালয়েশিয়ার লোক পাঠানোর দরজা খুলে যাবে।

এদিকে বাংলাদেশের একটি অসাধু চক্র মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য বাছাই করা কর্মীদের স্বাস্হ্য পরীক্ষার কাজ পেতেও তদবির চলছে। এ কাজের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। কিন্তু বায়রার কয়েক জন প্রভাবশালী সদস্য গত ২৭ জুলাই সেদেশের মানবসম্পদ মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে স্বাস্হ্য পরীক্ষার কাজটি পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সিন্ডিকেটের এসব তদবির জনশক্তি রপ্তানিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

ইত্তেফাক/এএইচপি