রাজধানীর দক্ষিণখানে ১০তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সানজানা মোসাদ্দিকার (২১) আত্মহত্যার ঘটনায় তার বাবা শাহীন আলমের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) শাহীন আলমকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তার সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) ম্যাজিস্ট্রেট শুভ্রা চক্রবর্তী এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, গত শনিবার দুপুরে দক্ষিণখান মোল্লারটেক এলাকার একটি ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই শিক্ষার্থী। ওই রাতেই সানজানার মা উম্মে সালমা বাদী হয়ে শাহীন আলমের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সানজানার বাবা সানজানাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছেন এমন অভিযোগ ছিল। এরপর থেকেই আমরা তাকে খুঁজছিলাম। কিন্তু তিনি ঘটনার পরপরই আত্মগোপনে চলে যান। আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যাই। গতকাল দুপুরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে, ছাদ থেকে পড়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী সানজানা মোসাদ্দিকার মৃত্যুর পর উদ্ধার হওয়া সুইসাইডল নোটের মাধ্যমে জানা গিয়েছিল বাবার হাতে তার নিয়মিত নির্যাতিত হওয়ার কথা। সেখানে ফারজানা লেখেন- আমার মৃত্যুর জন্য আমার বাবা দায়ী। একটা ঘরে পশুর সঙ্গে থাকা যায়। কিন্তু অমানুষের সঙ্গে না। একজন অত্যাচারী রেপিস্ট যে কাজের মেয়েকেও ছাড়ে নাই। আমি তার করুণ ভাগ্যের সূচনা।
ঘটনার পর দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক মিয়া জানিয়েছিলেন, মেয়েটির বাবার গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা (রেন্ট এ কার) আছে। শশুরবাড়ির সূত্রে দক্ষিণখানের ভবনটিতে পাওয়া ফ্ল্যাটেই তারা থাকতেন। কিছুদিন আগে তার দ্বিতীয় বিয়ের কথা প্রকাশ পেলে ফারজানার মায়ের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এরপরও তিনি মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে যেতেন। মেয়ের লেখাপড়ার খরচও তিনি দিতেন না বলে অভিযোগ মায়ের। এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি, ঝগড়াঝাঁটি লেগেই ছিল। দক্ষিণখান থানা পুলিশ আরো জানিয়েছিলো, ওই বাড়ি থেকে ছাত্রীর মনোরোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্রও তারা উদ্ধার করেছেন। মার্চ মাসের প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসক মেয়েটিকে একা না রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ফারজানাদের প্রতিবেশী সুরাইয়া লতাও জানিয়েছেন নির্যাতনের ভয়ংকর তথ্য। মাসখানেক আগে সানজানা তার প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার করার পর তারা গিয়ে দেখতে পান, তার গলায় বঁটি ধরে আছেন গ্রেপ্তার বাবা। সানজানার আরেক প্রতিবেশী নাজমুন নাহার বলেন, সানজানার বাবা আশপাশে প্রচার করেছেন, সে তার সন্তান না। তার স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তানসহ তাকে বিয়ে করেছেন, তবে ঘটনা যাই হোক, জেনেশুনেই উনি সব করেছেন। এভাবে মারামারি তো করতে পারেন না।
সানজানার মা উম্মে সালমা জানান, মাস কয়েক আগে শাহীনের আরও একটি বিয়ে করার তথ্য জানতে পারি। শাহীনের সেই স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। একদিকে বাবার অত্যাচার এবং দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনায় সানজানা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।’ কতদিন ধরে অত্যাচার চলেছে জানতে চাইলে সালমা বলেন, ‘সানজানার বাবা আগে ড্রাইভার ছিল। ৫ বছর ধরে অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে। সালমার অভিযোগ, বাসার কাজের মেয়ের সঙ্গে জোরপূর্বক শাহীনের শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি জানার পর সেই মেয়েটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন তিনি।