বহু কালজয়ী গানের স্রষ্টা, কিংবদন্তি গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার মারা গেছেন। রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ছুটে আসেন অনেক তারকা। তাদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনির খান। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের এভাবে চলে যাওয়া কোনোভাবেই মানতে পারছেন না তিনি। হাসপাতালে ঢুকেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মনির খান বলেন, “বিশ্ব জানে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথা। আমি তার সন্তানতুল্য। তিনি বলতেন আমার দুটি ছেলে। একজন উপল, আরেকজন মনির। আজ থেকে তার আদর, স্নেহ, ভালোবাসা ও শাসন থেকে বঞ্চিত হলাম। প্রায় প্রতিদিনই তার সঙ্গে আমার কথা হতো। কোনো কারণে আমি ফোন করতে না পারলে তিনিই ফোন দিতেন।”
তিনি বলেন, “পহেলা আগস্ট আমার জন্মদিনে তিনি একটি গান পাঠিয়ে তিনি বললেন, বাবা এর থেকে মূল্যবান সম্পদ আমার কাছে আর কিছু নাই। একটি গান পাঠালাম এটি যত্ন করে রেখো। আর আমার জন্য দোয়া করো।”
গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান লেখেন ১৯৬৭ সালে আয়না ও অবশিষ্ট চলচ্চিত্রের জন্য।
‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’-সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের এই রচয়িতা এই গীতিকবি। বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় তার লেখা গানই রয়েছে চারটি। তার লেখা আরও কালজয়ী কিছু গান হলো- ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ প্রভৃতি।
২০০২ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন তিনি। এছাড়াও পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একাধিকবার বাচসাস পুরস্কার, বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড, ডেইলি স্টার কর্তৃক লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জিত পুরস্কারের সংখ্যা একশর বেশি।