দুর্নীতির একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। অনুসন্ধান বা তদন্তের স্বার্থে কোন ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দেওয়া হলে তাতে দুদক আইন ও বিধির কোন ব্যত্যয় হয় না। দুর্নীতির যথাযথ ও কার্যকর অনুসন্ধান বা তদন্তের স্বার্থে কোন ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দেওয়ার এই বিধান অসৎউদ্দেশে নয়, বরং কমিশনের স্বচ্ছতাই প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘দুদক বনাম আশরাফুল হক’ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আদালত রায়ে বলেছে, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নোটিশ প্রদান সংক্রান্ত ২০০৪ সালের দুদক আইনের ১৯ ও ২০ ধারা এবং ২০০৭ সালের দুদক বিধিমালার ৬, ৮ ও ১১ বিধিতে এ বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। আইনের এসব ধারা ও বিধিমালার বিধি পর্যালোচনায় এটা কাঁচের মত পরিষ্কার যে, দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে একাধিক নোটিশ প্রদানের এই আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক। এই একাধিক নোটিশ দেওয়ার ফলে যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান বা তদন্ত চলমান তিনি তার পক্ষে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সঠিকভাবে অভিযোগ খণ্ডানোর সুযোগ পাচ্ছেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন।
বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. বোরহানউদ্দিন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কৃঞ্চা দেবনাথ। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে পূর্ণাঙ্গ এই রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত আশরাফুল হক নামে এক ব্যক্তির সম্পদের হিসাব চেয়ে ২০১০ সালে নোটিশ দেয় দুদক। পরে সম্পদের হিসাব বিবরণী সংক্রান্ত নথি চেয়ে ২০১১ সালে ওই ব্যক্তিকে আরেকটি নোটিশ দেয়া হয়। একই বিষয়ে একাধিক নোটিশ দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। ওই রিটের উপর জারিকৃত রুল খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন ওই ব্যক্তি। আপিল বিভাগ একই বিষয়ে একাধিক নোটিশ প্রদানের বিষয়টি বেআইনি ঘোষণা করে ২০১৬ সালে রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, দুর্নীতির একই বিষয়ে কোন ব্যক্তিকে একাধিক নোটিশ দেওয়ার সুযোগ নাই। যদি কোন দুদক কর্মকর্তা এ ধরনের নোটিশ দেন তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে কমিশনকে।
আপিল বিভাগের এই রায় পুন:বির্বেচনা চেয়ে ২০২০ সালে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে দুদক। গত ৩০ জুন আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনটি পর্যবেক্ষণ সহকারে নিষ্পত্তি করে দেন। আদালতে কমিশনের পক্ষে খুরশীদ আলম খান ও আশরাফুলের পক্ষে এসএম শাহজানান শুনানি করেন।
খুরশীদ আলম খান ইত্তেফাককে বলেন, আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে এখন থেকে একই দুর্নীতির অভিযোগে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক নোটিশ দিতে দুদকের সামনে আর কোন আইনগত বাধা থাকল না। তবে এসব নোটিশ দেওয়ার ক্ষেত্রে দুদককে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে কোন ব্যক্তির আত্মমর্যাদা নষ্ট না হয়।