বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঢাকায় ইন্টারপা সম্মেলন শুরু

আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:২০

পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ এর ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সংগঠন ইন্টারপা (International Association of Police Academies- INTERPA) এর ১১তম বার্ষিক ইন্টারপা সম্মেলন শুরু হয়েছে।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইন্টারপা সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইন্টারপা সম্মেলন উদ্বোধন করেন।

'ডিজিটালাইজেশন অব পুলিশিং' প্রতিপাদ্যে এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)।

ইন্টারপা ও তার্কিশ ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইলমাজ কোলাক (YILMAZ COLAK) অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ-এর রেক্টর (অতিরিক্ত আইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক।

ইন্টারপা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ছবি- সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে সাইবার অপরাধ এবং সংঘবদ্ধ বহুজাতিক অপরাধের কারণে সৃষ্ট মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড রোধে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সুসংহত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও অর্থপাচারের পাশাপাশি সহিংস চরমপন্থা এবং প্রযুক্তি নির্ভর অন্যান্য অপরাধ দমনে পুলিশের ডিজিটালাইজেশন একটি চমৎকার উপায় হতে পারে। বর্তমানে এসব অপরাধের কারণে বিশ্বজুড়ে পুলিশের দায়িত্ব পালনে তীব্র চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। আজকের বিশ্বে একা কোন দেশের পক্ষে এসব মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই, এসব সমস্যা মোকাবেলায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সুসংহত করার কোন বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, সহিংস চরমপন্থা এবং প্রযুক্তিভিত্তিক বহুজাতিক অপরাধ দমনে চাহিদা ও ফলাফলভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

ইন্টারপা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন। ছবি- সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ইন্টারপা সদস্যদের সম্মিলিত ইচ্ছা ও যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশ্বের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য তৈরি  হতে পারে।

তিনি বলেন, এই সম্মেলনের মূল থিম ‘ডিজিটালাইজেশন অব পুলিশিং’ প্রকৃত অর্থেই সময়োপযোগী হয়েছে। বিশ্বায়নের এই যুগে সহিংস চরমপন্থা এবং আন্তঃসংগঠিত অপরাধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যে এক বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সীমানা সামান্যই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রযুক্তি ও যোগাযোগের নতুন অগ্রগতি এই ধরনের অপরাধ নেটওয়ার্কগুলোকে তাদের মানবতাবিরোধী পরিকল্পনার বর্ধিত গতিশীলতার সঙ্গে চালিয়ে যেতে সক্ষম করেছে।

ইন্টারপা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। ছবি- সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ফলে সারা বিশ্বে এর সুদূরপ্রসারী অস্থিতিশীল প্রভাব পড়ছে। নতুন চ্যালেঞ্জসমূহ সাইবার অপরাধ, মুদ্রা পাচার, মুদ্রা জাল, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং অন্যান্য আধুনিক হুমকিরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। 

সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, মহাদেশ জুড়ে সদস্য পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পেশাদারদের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারপার এই অনন্য সম্মেলন অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ভাগ করে নেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন পথ খুলে দেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গর্ব অনুভব করেন যে বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা সফলভাবে মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতা ও সহিষ্ণুতা প্রমাণ করেছে। 

ঢাকায় ইন্টারপা সম্মেলন শুরু

শেখ হাসিনা ইন্টারপা সম্মেলনের উদ্বোধনে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এই সম্মেলনের আয়োজক হতে পেরে আমরা সৌভাগ্যবান এবং আপনাদের উপস্থিতিতে সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি।
  
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশগঠনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, সকল সামাজিক সূচকে আমরা কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এর ফলে অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বাণিজ্য ও ব্যবসা, সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এসডিজির সফল বাস্তবায়নের দিকে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও ক্রমবর্ধমান তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ, সেবামুখী এবং আইসিটিবান্ধব সেবার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণসহ সকলের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি সহজলভ্য করে দেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ রূপান্তরের জন্য সবধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

ইন্টারপা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন আগত অতিথিরা। ছবি- সংগৃহীত

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমরা গর্ব করে বলতে চাই, বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে।
 
তিনি বলেন, আমাদের অগ্রগতি ও উন্নয়নের এ ধারায় বাংলাদেশ পুলিশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমাদের সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য গুণগত পরিবর্তন এসেছে। আমরা আগামী দিনেও পুলিশের এই অগ্রগতির ধারা এগিয়ে নিয়ে যাব।

প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে বলেন, সম্মেলনটি ইন্টারপা’র সকল সদস্য দেশকে একটি উদ্ভাবনী, টেকসই, দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগ এবং সহযোগিতার ধরন অন্বেষণে সাধারণ ঐক্যমতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেবে।

ঢাকায় ইন্টারপা সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিরা। ছবি- সংগৃহীত

তিনি বলেন, আমরা এও বিশ্বাস করি, এই সকল দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষতা, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি এবং সমন্বয় বিশ্বজুড়ে সহিংস চরমপন্থা এবং উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক বহুজাতিক অপরাধ দমনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ তাদের পেশাদারিত্ব নিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে ইন্টারপা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ সম্মেলন সাইবার অপরাধ দমনে সদস্য দেশের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও উত্তম চর্চা বিনিময়ের সুযোগ ঘটাবে।

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, আমরা যদি সাইবার জগতের সম্ভাব্য হুমকি ও ঝুঁকি সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করি তাহলে পুলিশের সক্ষমতা ও উদ্যোগগুলো বিফলে যাবে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এখন সাইবার জগতের দিকে মনোনিবেশ করছে। 

আইজিপি বলেন, বর্তমানে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সেবা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন, অনলাইন ইমিগ্রেশন, ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ও ই-ট্রাফিক সিকিউরিটি সিস্টেম ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী দিনে সাইবার হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার সময় এসেছে।

 ইন্টারপা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন আগত অতিথিরা। ছবি- সংগৃহীত

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও তথ্য-প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং সাধারণ মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে । 

আইজিপি বলেন, প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে কয়েক দশক ধরে অর্থনীতি, সামাজিক জীবনে উন্নতির ফলে অপরাধ এবং অপরাধীদের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। অপরাধীরা নতুন নতুন পন্থায় অপরাধ করছে। তারা বিশ্বের অন্য দেশে বসেও সাইবার হামলা চালিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করতে পারে। অপরাধীরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে সাইবার হামলা করে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং উত্তম চর্চা অনুশীলন এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে ইন্টারপা সম্মেলন অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংগঠিত অপরাধ মোকাবেলায়  প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা ইতিমধ্যে সাইবার জগতে সংগঠিত অপরাধ মোকাবেলায় সক্ষমতা প্রমাণে সমর্থ হয়েছি। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৪৪টি দেশের ১২৭ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন। 

ইত্তেফাক/এমএএম