সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

মিথ্যা তথ্য দিয়ে মাদক মামলার অভিযোগ, বাদী-সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তাকে শোকজ

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:২৫

মিথ্যা তথ্য দিয়ে মাদক মামলা করার অভিযোগে মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা ও সাক্ষীদের শোকজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইয়াবা মামলার আসামি আবদুর রহমানকে খালাস দিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

আদালতে দায়ের হওয়া এ মামলার নম্বর এসটি ৮৩১/২১। মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা ও দুই সাক্ষী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে কেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন এ আদেশ দেন। খালাসপ্রাপ্ত রহমান উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালি গ্রামের মো. ফরিদের ছেলে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় কলাতলীর শুকনাছড়ি এলাকার মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন মনছুর কুলিং কর্নারের সামনে থেকে আবদুর রহমান ও নুরুল আমিন আটক করা হয়। ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ এই দুইজনকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া। ইয়াবাগুলো আবদুর রহমানের ডানহাতে থাকা শপিংব্যাগে ছিল বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। পরে একই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলা থেকে নুরুল আমিনকে বাদ দেওয়ার আবেদন করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামান চার্জশিট দাখিল করেন। এতে ৬ জনকে সাক্ষী করা হয়। এরপর একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আবদুর রহমানকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

চার্জশিট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে মামলার সাক্ষীরা হলেন, মামলার বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া, তদন্ত কর্মকর্তা উপ- পরিদর্শক কামরুরজ্জামান, সহকারী উপ- পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম ও সিপাহী আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া মামলার পাবলিক সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন এজাহারে দেখানো ঘটনাস্থল শুকনাছড়ি মনছুর কুলিং কর্নারের মালিক মনছুর আলম ও তার বাবা নুরুল হাকিম।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি মোজাফফর আহমদ হেলালী বলেন, ওই মামলায় আসামি পক্ষে দুইজনের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। তারা হলেন, উখিয়ার ইনানীর পূর্ব নুরার ডেইলের মৃত নজির আহমদের ছেলে সানাউল্লাহ এবং একই উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বড় ইনানির বাদশা মিয়ার ছেলে নুরুল আমিন রানা।

তিনি বলেন, সাফাই সাক্ষীরা আদালতকে জানিয়েছেন ঘটনার দিন তারা দুইজন ইনানীর আব্বাসী রেস্টুরেন্টে চা খাচ্ছিলেন। সেখান বসে রানা রহমানকে ফোন করেন। পরে দুই মিনিটের মধ্যে রহমান সেখানে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর ওয়াকিটকি কোমরে থাকা দুই ব্যক্তি রহমানকে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করেন। রহমান তার নাম জানালেই তাকে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে রহমানের কাছ থেকে কোনো ইয়াবা পাননি তারা।

মোজাফফর আরও বলেন, জীবন বড়ুয়ার দায়ের করা মামলার ৬ জন সাক্ষীর মধ্যে চারজনেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কর্মরত। সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য, তদন্ত কর্মকর্তার চার্জশিট, মামলার বাদীর এজাহার ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যতে আদালতের মনে হয়েছে মামলাটি সাজানো। এইজন্য রহমানকে খালাস দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের ওই চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না তা জনতে চেয়ে শোকজ করেছেন আদালত। তাদেরকে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আদালত মনে করেছে ইয়াবাগুলো রহমানের কাছে পাওয়া যায়নি। অন্য কারো কাছ থেকে নিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। নতুবা রহমানকে এক জায়গা থেকে আটক করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলাটি লিপিবদ্ধ হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্ত রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি জামিন পাওয়ার পর থেকে আর হাজির হননি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপ-পরিদর্শক কামরুরজ্জামান বলেন, মাসে দুই তিনটি চার্জশিট আদালতে দিতে হয়। কোন মামলার চার্জশিটে কী লেখা রয়েছে মনে নেই। আদালতের আদেশ এখনো পাইনি, পেলে আদেশ অনুযায়ী কাজ করবো।

মামলার বাদী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া বলেন, আদালত যদি আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে থাকেন তবে ব্যাখ্যা দেবো। 

ইত্তেফাক/এসটিএম