শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইত্তেফাকে রানি এলিজাবেথের বাংলাদেশ সফর

আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:৩১

ব্রিটেনের সদ্য প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সে বছর ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশে ছিলেন তিনি।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ওই সময় যেসব বক্তব্য দিয়েছিলেন তার মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহারও ছিল। সেসময়ে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার কয়েকটি প্রতিবেদনে রানি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। 

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

১৭ নভেম্বর ইত্তেফাকে প্রকাশিত ‌‌‘আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি: রাণী এলিজাবেথ’ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৪ দিনের সফরের শেষ দিন রানি ও প্রিন্স ফিলিপের সম্মানে ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে তৎকালীন মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। 

ওই অনুষ্ঠানে দেওয়া এক ভাষণে করপোরেশনের প্রশাসকের উদ্দেশ্যে রানি বাংলায় বলেন, ‘জনাব প্রশাসক, অনুগ্রহ করে ঢাকাবাসীকে জানিয়ে দিন যে তাদের প্রচেষ্টায় আমরা তাদের সঙ্গে রয়েছি।’

১৯৮৩ সালের ১৬ নভেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক।

ইত্তেফাকের প্রতিবেদনগুলো ওই সময় সাধু ভাষায় লেখা হতো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রানি কথা বলেছিলেন চলতি ভাষায়। এতটুকু বাদে বাকি বক্তব্য ইংরেজিতেই ছিল।

রানি যেদিন (১৪ নভেম্বর) ঢাকায় পা রাখেন সেদিন ইত্তেফাকের প্রধান সংবাদের শিরোনাম ছিল এমন: খোশ আমদেদ এলিজাবেথ।

ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

১৫ তারিখের শিরোনাম ছিল, 'রাণী এলিজাবেথের প্রাণঢালা স্মরণীয় অভ্যর্থনা।' প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহসান উদ্দিন চৌধুরী, বেগম চৌধুরী এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লেফট্যানেন্ট জেনারেল এইচ এম এরশাদ ও বেগম রওশন এরশাদ। বিমানবন্দরের কাজ শেষ করে ৯টা ১০ মিনিটে শুরু হয় মোটর শোভাযাত্রা। 

১৯৮৩ সালের ১৫ নভেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক।

১৬ নভেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের ভোজসভায় স্বাগত বক্তব্যে রানি শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৮ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার পর তার বাংলাদেশ সফর নিয়ে নানা ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এরমধ্যে বেশিরভাগ গণমাধ্যমে গাজীপুরের বৈরাগীর চালা নামের গ্রামটির প্রসঙ্গ এসেছে। রানি ওই গ্রামে যান ১৬ নভেম্বর।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

বৈরাগীর চালা গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে যাওয়া কর্মকর্তারা রানি এলিজাবেথকে সেখানে স্বাগত জানান।

দোভাষীর সাহায্যে গ্রামবাসীর বক্তব্য শুনে রানি বলেন, `আই আম ভেরী হাপী।'

১৯৮৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক।

বৈরাগীর চালা গ্রামকে বিদায় জানানোর আগে রানি সবাইকে অবাক করে প্রটোকল ভেঙে একটি মুদি দোকানে ঢুকে পড়েন। ইত্তেফাকের প্রতিবেদনের ভাষায়, `৫৭ বৎসর বয়সের রাণী এলিজাবেথ বৈরাগীর চালায় আসিয়া ১৭ বৎসরের প্রাণ-চঞ্চল তরুণীর মত মুদীখানায় ঝুলানো সেলেপিনের কাগজে মোড়ানো ১০ পয়সার তেঁতুলের আচার হাতে নাড়িয়া-চাড়িয়া অনাবিল মাধুর্যের হাসিতে-হাসিতে বৈরাগীর চালাকে বিদায় জানাইলেন।`

উল্লেখ্য, ব্রিটেনের স্থানীয় সময় ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রানি এলিজাবেথ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় তার কর্মময় জীবনের ৯৬ বছর এবং শাসনকালের ৭০ বছর। 

ইত্তেফাক/এএএম