সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল 

রোগীর তিন বেলা খাবারে দৈনিক বরাদ্দ ১০৯ টাকা!

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:৩২

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের তিন বেলা খাবারের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ১০৯ টাকা। এই বাজেটে টানা ১০ বছর এক জন ঠিকাদার খাবার সরবরাহ করে এলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কারণে এতদিন পর তিনিও এই দামে খাবার সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। নতুন দরপত্র আহ্বানের দেনদরবার শুরু হয়ে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছেন। তবে এসব তোড়জোড়ের মধ্যে ২৭৮ জন রোগী প্রতিনিয়ত খাবার নিয়ে বিড়ম্বনায় ভুগছেন।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের খাবার সরবরাহের টেন্ডার হয়। সে সময় ঠিকাদার মো. শফিকুর রহমান হাসপাতালের নির্ধারিত ২৫০ শয্যা এবং করোনারি কেয়ার ইউনিটের ২৮ জন রোগীর খাবার সরবরাহের কার্যাদেশ পান। এ সময় টেন্ডারে ত্রুটির অভিযোগ তুলে আরেক ঠিকাদার হাফিজুর রহমান ১৬ জুন ২০১৪ তারিখে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। আদালতের নির্দেশে নতুন করে টেন্ডার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে ১০ অর্থবছর ধরে একই প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহ করে আসছে। এতদিন চুপচাপ থাকলেও খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দ্রব্যমূল্যের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতির মুখে নতুন টেন্ডার আহ্বানের দরবার শুরু করেছেন। ঠিকাদারের আগ্রহের সূত্র ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এ প্রশ্নে সরব হয়েছেন। 

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় খাবারের পরিমাণ ও গুণগত মান দুটোই কমেছে। ১০৯ টাকায় তিন বেলা খাবার কী করে সম্ভব? ১০ বছর আগের রেট আজও একই রয়েছে। উচ্চ আদালতে রিট থাকায় গত ১০ বছর টেন্ডার হয় না। আগের ঠিকাদারই খাবার সরবরাহ করে আসছেন। আমরা উচ্চ আদালতে রিটের স্ট্রে চাচ্ছি। তবে সংশ্লিষ্ট ডিভিশন অবকাশকালীন ছুটিতে থাকায় অগ্রগতি হয়নি। 

হাসপাতালের রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ এখন আরও বেড়েছে। খাদ্যসামগ্রীর দাম দফায় দফায় বাড়লেও ঠিকাদার ১০ বছর আগের রেটে খাদ্য সরবরাহের টাকা পাওয়ায় ধাপে ধাপে খাবারের মান কমিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ২৫০ শয্যা হাসপাতালে বেশিরভাগ সময় ৪৫০ থেকে ৫০০ রোগী ভর্তি থাকায় শয্যার অতিরিক্ত রোগীকে খাবার না দেওয়ার রোগী ও স্বজনদের অসন্তোষ লেগেই থাকে।

সূত্র মতে, হাসপাতালে জনপ্রতি দৈনিক বরাদ্দ ১২৫ টাকার খাবার। এর মধ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স বাদ দিলে থাকে ১১৩ টাকা। এতে রোগীরা পান ১০০ গ্রাম ভাত আর একটু সবজি, ২০ থেকে ২৫ গ্রামের এক টুকরো মাছ কিংবা মাংস। অথচ তাদের পাওয়ার কথা ৮০ গ্রাম মাছ-মাংস। তবে অভিযোগ মানতে নারাজ ঠিকাদার। খাবারের মান প্রসঙ্গে ঠিকাদার মো. শফিকুর রহমান বলেন, পণ্যের দাম বাড়লেও খাবারের মানে ত্রুটি নেই। তিনি বলেন, প্রত্যেক রোগীর জন্য সকালের নাস্তা হিসেবে ১০০ গ্রাম পাউরুটি, একটি ডিম ও দুই পিস কলা দেওয়া হয়। দুপুরে ভাতের সঙ্গে ৮০ গ্রাম মাছ বা মাংস ও ২০ গ্রাম ডাল দেওয়া হয়। রাতে দেওয়া হয় ভাত, ডিম ও সবজি। আর এম ও সাহেব খাবার দেখে বুঝে নেন। খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই।

হাইকোর্টে রিট দাখিলকারী ঠিকাদার হাফিজুর রহমানের সঙ্গে খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার মো. শফিকুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, দীর্ঘদিনের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘১০ বছর আগে আমার মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ থাকত। এখন ৪-৫ হাজারও থাকে না। এজন্য আমি মূল্যবৃদ্ধি করার জন্য দরখাস্ত দিয়েছি। ডিজি অফিসের অনুমোদন নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক চাইলেই দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন। ’

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আর এম ও) ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, খাবারের মান বিলো এভারেজ বলা যাবে না। তবে মাছ-মাংসে একটু গন্ধ থাকে। যে সাইজের মাছ থাকার কথা, সেটা কেনা হয় ঠিকই, তবে রোগীদের যে পরিমাণ মাছ-মাংস দেওয়ার কথা, সেটা সব সময় ঠিক থাকে না। আগে ডালে শুধু পানি থাকত। এখন সেটা নেই। আসলে এরা তো ফাঁকফোকড় খোঁজে।

ইত্তেফাক/ইআ