রোববার, ০৪ জুন ২০২৩, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আত্মসমর্পণের নির্দেশের পরও অন্য বেঞ্চে গিয়ে আগাম জামিন চাওয়ার সুযোগ আছে কি?

জামিন স্থগিতের শুনানিতে সেলিম খানের কৌসুলিকে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:১১

গত আগস্ট মাসে চেয়েছিলেন আগাম জামিন। কিন্তু জামিন না দিয়ে দুর্নীতির মামলায় চাঁদপুর সদর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম খানকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে মামলার নম্বর ভুল থাকায় আবারো হাইকোর্টের আরেকটি দ্বৈত বেঞ্চে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন তিনি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর চার সপ্তাহের আগাম জামিন দেয় হাইকোর্ট। ওই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক। 

শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) আসামির আগাম জামিন আদেশ স্থগিত করে দিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এই আদেশ দেন।

একই মামলায় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়ার পর আরেকটি বেঞ্চে গিয়ে আসামির আবারও আগাম জামিন চাওয়ার সুযোগ রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে চেম্বার জজ আদালতে দুদকের করা আবেদনের শুনানিতে। 

শুনানিকালে দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আগাম জামিন না দিয়ে সেলিম খানকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ওই আত্মসমর্পণের আদেশে মামলার নম্বর ভুল থাকায় তিনি আত্মসমর্পণ না করে হাইকোর্টের আরেকটি দ্বৈত বেঞ্চে গিয়ে আগাম জামিন চান। এই জামিন চাওয়াটা আইনসঙ্গত হয়নি। এ কারণে হাইকোর্টের দেওয়া আগাম জামিন স্থগিত করে আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করছি।

এ পর্যায়ে আদালত আসামি সেলিম খানের কৌসুলি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমতাজউদ্দিন ফকিরের কাছে জানতে চান যে, আত্মসমর্পণের আদেশ থাকার পরেও আরেকটি বেঞ্চে গিয়ে আসামির আগাম জামিন চাওয়ার সুযোগ আছে কি? জবাবে এই আইনজীবী বলেন, সেলিম খানের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ সত্য নয়। এছাড়া হাইকোর্টের আত্মসমর্পণ আদেশে মামলার নম্বর ভুল ছিলো। ইতিমধ্যে কোর্টে অবকাশ শুরুর কারণে ওই বেঞ্চের এখতিয়ার না থাকায় আমরা আরেকটি বেঞ্চে গিয়ে আগাম জামিন চেয়েছি। 

জবাবে দুদক কৌসুলি বলেন, হাইকোর্টের আত্মসমর্পণের আদেশে মামলার নম্বর ভুল থাকায় সেটা সংশোধনের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে দরখাস্ত দেওয়ার সুযোগ ছিলো। কিন্তু সেই দরখাস্ত না দিয়ে উনি আরেকটি বেঞ্চে গিয়ে আগাম জামিন চেয়েছেন। এটা কোনভাবেই আইনসঙ্গত হয় নাই। তিনি বলেন, হাইকোর্ট তিন সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলো। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সেলিম খান আইনের দৃষ্টিতে এখন পলাতক। শুনানি শেষে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আগাম জামিন আদেশ স্থগিত করে দিয়ে আসামি সেলিম খানকে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়।

দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ গত পহেলা আগস্ট সেলিম খানের বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলার অভিযোগে বলা হয়, সেলিম খান অবৈধ উপায়ে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতি পূর্ণভাবে অর্জন করে নিজ ভোগ দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তিনি ৬৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। 

এই মামলায় আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন তিনি। গত ১৪ আগস্ট বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামিকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে ওই আত্মসমর্পণের আদেশে মামলার নম্বর ভুল থাকায় হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চে গিয়ে আগাম জামিন চাওয়া হয়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ সেলিম খানকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি