বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মুন্সীগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পুলিশ-বিএনপির, ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:৫৪

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০জন আহত হয়েছে। এর ফলে উপজেলার মুক্তারপুরের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ান।

তবে এই সংঘর্ষ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে পুলিশ ও বিএনপি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, আমাদের কাছে খবর আসে বিএনপি'র দুটি গ্রুপ রাস্তায় নেমে নিজেরা-নিজেরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এই খবর পাওয়ার পর  সার্কেল এসপির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের ওপর উল্টো হামলা চালায় বিএনপির নেতা-কমীরা। পুলিশের ওপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ পর্যন্ত হামলার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. মহিউদ্দিন বলেন, পুলিশের সঙ্গে কথা বলেই আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মুক্তারপুর ফেরিঘাট এলাকায় মসজিদের সামনে সমাবেশ করছিলাম। এই সময় হঠাৎ পুলিশ এসে স্লোগান দিতে বন্ধ করতে বলে এবং ব্যানার ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে। কর্মীরা নিতে বাধা দিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এই সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এর ঘটনা ঘটে। এই সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও গুলিবর্ষণ করে। এতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়। 

তিনি আরও জানান, আহতদের মধ্যে শাওন নামের একজন যুবদল নেতার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন। সমাবেশে কেন্দ্রীয় বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম ও ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, জাহাঙ্গীরকে নাক-কান-গলা বিভাগে, বাকি দুজনকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জাহাঙ্গীর ও শাওনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।

এর আগে বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় পূর্ব নির্ধারিত বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচি অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এখানে আসতে থাকে। পুলিশ বিভিন্ন পয়েন্টে মিছিলকারীদের থামিয়ে ফিরিয়ে দিতে থাকে। এতে মিছিলকারীরা কোন মতে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ভিন্ন ভিন্নভাবে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় জড়ো হতে থাকে।

বিক্ষোভ কর্মসূচির এলাকাটিতে আগ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। তবে এখানে প্রায় ২ হাজার লোকের সমাবেশ হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে ঘটনার সময় প্রায় ৫ হাজার লোকের সমাবেশ ঘটে। এতো নেতাকর্মীর বিপরীতে সমাবেশস্থলে পুলিশের সংখ্যা ছিল ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো। বিক্ষোভ সমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশ বিএনপি নেতা কর্মীদের সমাবেশে নির্ধারিত লোকজন নিয়ে সমাবেশ করতে বলে। 

কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। বিএনপি সেখানে পুলিশের ওপর হামলার প্রস্তুতি হিসেবে আগেই ইটপাটকেল জড়ো করে রেখে ছিলো বলে বিএনপির বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ । তা না হলে এখানে পুলিশ এতো আহত হলো কিভাবে। যেসব পুলিশ আহত হয়েছে তারা সবাই ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছে। এখানে এ ঘটনার সময়ে অপেক্ষমান মোটরসাইকেলে কে বা কারা আগুন দিয়ে আতংকের সৃষ্টি করে। এখানে এ সময়ে ডিবি পুলিশের মোটর সাইকেলও খোয়া যায়।

এ ঘটনায় প্রায় ৩০ জন পুলিশ আহত হয়েছে। তারমধ্যে গুরুতর একজন আহত পুলিশকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত পুলিশের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল) মিনহাজ উল ইসলাম ও মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ তারিকুজ্জামান। এ আহতদের মধ্যে নারী পুলিশও রয়েছে। পুলিশের অন্যান্য আহতরা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশের গুলিতে বিএনপির নেতা কর্মীদের মধ্যে চরকেওয়ার ইউনিয়নের গুহেরকান্দি গ্রামের হারুন অর রশিদ সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে তার অবস্থা আশংকাজনক। বিএনপির অন্য আহতরা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে কোন চিকিৎসা নেননি। তারা গ্রেফতারের ভয়ে অন্যত্র চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ বিএনপির ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় কালবেলা মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি রুবেল সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে। তার চোখের নিচের অংশে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে।

পুলিশ বিএনপির ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।  বর্তমান ঘটনাস্থলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি