রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সিসি ক্যামেরা দিয়েও বিমানবন্দর ‘আন্তর্জাতিক মানের’ হচ্ছে না

আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:০৬

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ কাটা এবং মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসা মেয়েদের লাগেজ থেকে টাকা উধাওয়ের ঘটনা আবার লজ্জায় ফেলেছে।

অতীতে অনেক বেশি সংখ্যায় হলেও ইদানীং তা কমে এসেছে। অনেক লেখালেখি ও সমালোচনার প্রেক্ষিতে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে অবস্থার উন্নতি হলেও এ ধরনের ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সাফ নারী ফুটবল জয়ী দুজন খেলোয়াড়ের ডলার ও আরো কিছু জিনিসপত্র হারানোর ঘটনার পর বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার আবার সামনে এসে পড়ে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। গণমাধ্যমেও ফলাও করে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।

খেলোয়াড়ের টাকা চুরি ও লাগেজ ভাঙার কোনো ঘটনা বিমানবন্দরে ঘটেনি বলে দাবি করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা দাবি করছেন, লাগেজ ভাঙা বা চুরির কোনো প্রমাণ তারা পাননি এবং অক্ষতভাবে খেলোয়াড়দের লাগেজ বাফুফে কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করা হয়। তবে এমন দাবি করে সকল দায় এড়ানো যাবে না।

ঢাকা বিমানবন্দরের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায়শই যাত্রীরা অভিযোগ করেন যে, তারা লাগেজ অক্ষত অবস্থায় পাননি, অথবা লাগেজ থেকে তাদের মূল্যবান জিনিস চুরি হয়ে গেছে। এ নিয়ে ফেসবুকেও আলোচনা দেখা যায়। আবার গণশুনানিতেও এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। গত মাসে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার মান নিয়ে এক গণশুনানির আয়োজন করে। সেখানে দুজন যাত্রী অভিযোগ করেন, বিমানবন্দরে কিভাবে তাদের হয়রানির করা হয় এবং অনেকের মূল্যবান জিনিস লাগেজ থেকে খোয়া যায়। আর এমন ঘটনা বেশি ঘটে প্রবাসী কর্মীদের সাথে।

কিন্তু কিভাবে এমন ঘটনা এখনো ঘটছে?

সিসি ক্যামেরা বসানো ছাড়াও তদারকি বৃদ্ধি করা হয়েছে বিমানবন্দরে। কিন্তু এরই মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাগেজ থেকে অর্থ, মালামাল চুরির সাথে জড়িত অল্প কিছু মানুষ। এদের মধ্যে আছে যারা লাগেজ বহন করে বিমানে তোলেন অথবা বিমান থেকে লাগেজ নামিয়ে বিমানবন্দরে আনেন, তারা। এরা একটা সিন্ডিকেট হয়ে কাজ করেন। কাজটি তারা খুবই সতর্কতার সাথে করেন। জানা জায়, তারা নির্দিষ্ট যাত্রীর লাগেজ টার্গেট করেন। অনেক ক্ষেত্রে লাগেজ দেখলেও তারা ধারণা করতে পারেন ভিতরে কী ধরনের জিনিস থাকতে পারে।

দুটি স্থানে লাগেজ থেকে টাকা ও মালামাল চুরি হতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়। একটি হচ্ছে চেক-ইন করার পর লাগেজ বেল্ট দিয়ে ভিতরে চলে যাওয়ার পর। আরেকটি হলো লাগেজ বিমানের কার্গোতে যখন তোলা বা নামানো হয়। এরা যেহেতু সিন্ডিকেট হিসেবে কাজ করেন, তাই চুরির ব্যাপারটি কেউ জানতে পারে না। জানাজানি হলেও চুরি যাওয়া মালামাল আর ফেতর পাওয়া যায় না।

বিমানবন্দরে লাগেজ আনা-নেয়ার কাজে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়, তাদের অনেকেই ৩-৪ লক্ষ টাকা ঘুস দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। ফলে এদের অনেকের মধ্যে লাগেজ থেকে মূল্যবান জিনিস চুরির প্রবণতা থাকে, তবে এদের সংখ্যা অনেক কম বলে জানা যায়।

সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে তদারকি ও অন্যান্য পদক্ষেপের ফলে আগের চেয়ে অবস্থার অনেক উন্নতি ঘতেছে। তবে কিছু ফাঁকফোকর রয়ে গেছে, যার ফলে এমন ঘটনা ঘটছে, কেননা, এখনো শর্ষের মধ্যে ভূত রয়ে গেছে। আর এসব কারণেই গ্রাউন্ড হান্ডেলিং কাজ বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও গ্রাউন্ড হান্ডেলিং আগের চেয়ে অনেক ভালো। তবে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। চেক-ইন ও ইমিগ্রেশনে এখনো অনেক সময় লাগে। আবার লাগেজ পেতেও অনেক সময় লেগে যায়। যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার বিষয়টিও ঘটে থাকে।

কর্তৃপক্ষের উচিত এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। বিবৃতি বা ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করে নিজেদের সকল দায় এড়ানোর প্রবণতা থেকে বের হয়ে সকল অভিযোগসমূহ গুরুত্বের
 সাথে বিবেচনা করতে হবে। লাগেজ কাটা বা লাগেজ থেকে জিনিস চুরির সাথে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি না দিলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আর সার্বিক সেবার মান আরো উন্নত করতে না পারলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিবেচনায় ঢাকা বিমানবন্দর পিছিয়ে থাকবে।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের হয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন এম আবুল কালাম আজাদ। এই প্রতিবেদনের সব ধরনের দায়ভার ডয়চে ভেলের।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি