সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়

বিদ্যুতের আসা-যাওয়া বেড়েছে, তদন্ত শুরু

ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক রাখতে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর কাজ করেনি

আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০৫:০০

জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে মঙ্গলবারের বিপর্যয়ের পর সরবরাহ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা হলেও গতকাল বুধবার সারা দেশে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুতের লোড ব্যবস্থাপনা এবং গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক রাখতে হিমশিম খেতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এদিকে বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নরসিংদীর ঘোড়াশালের একটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুকেন্দ্র চালুর পর মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৪ মিনিটে গ্রিড ট্রিপ করে (অকার্যকর হয়ে পড়ে)। এমন দুর্ঘটনার সময় লো ফ্রিকোয়েন্সির কিছু জেনারেটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে বিদ্যুতের লোডে ভারসাম্য রাখার কথা ছিল। কিন্তু তখন সে জেনারেটরগুলোও কাজ করেনি। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় গোটা পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডে বিপর্যয় ঘটে। অন্তত চার ঘণ্টা টানা বিদ্যুত্হীন ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহের ২৮টি জেলা। কোনো কোনো এলাকায় ১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ ছিল না। এছাড়া বেশির ভাগ এলাকাতেই গতকাল পর্যন্ত বিদ্যুতের আসা-যাওয়া বিদ্যমান ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুত্ সঞ্চালন ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটেড) হলে এ ধরনের কারিগরি ত্রুটি একটি সাবস্টেশন এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। গোটা গ্রিড এবং বিদ্যুত্ব্যবস্থা ধসে পড়ত না। ২০১৪ সালের ১ নভেম্বরে গ্রিড বিপর্যয়ের পর দেওয়া কারিগরি সুপারিশ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে গ্রিড বিপর্যয় এড়ানো যেত।

এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ২০১৪ সালে গ্রিড ট্রিপের পর সঞ্চালন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা সরকার করেছে। তখনকার অনেক সুপারিশ সরকার বাস্তবায়ন করে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটিয়েছে। 

গতকাল দেশের প্রায় সব জেলাতেই নির্ধারিত লোডশেডিংয়ের বাইরেও লোডশেড হয় বলে ইত্তেফাকের প্রতিনিধি ও গ্রাহক সূত্রে জানা গেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পিজিসিবির একাধিক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, এমনিতেই জ্বালানি ঘাটতিতে লোডশেড হচ্ছিল। মঙ্গলবার পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর কিছু এলাকায় পুনরায় সরবরাহ শুরু হলে সাবস্টেশন ও ট্রান্সফরমার পর্যায়ে কিছু ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুতের আসা-যাওয়া বেড়ে যায়।  

এদিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর গতকাল সকালে নরসিংদীর পলাশে ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা বিদ্যুকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম পরিদর্শন করতে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পিজিসিবির পরামর্শক শামছুর জোহা, নির্বাহী প্রকৌশলী আরেফিন সিদ্দিক ও সাইদুল ইসলাম।

তদন্ত কমিটির প্রধান পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী জানান, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দেশের কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাওয়ার নিয়ন্ত্রণকক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।   গ্রিডে বিপর্যয়ের পর ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ উত্পাদনকেন্দ্রের ৫ নম্বর ইউনিট বন্ধ হওয়ার পর গতকাল বুধবার পর্যন্ত এই কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়নি।

 গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পিজিসিবি ও পিডিবির দুইজন কর্মকর্তা এই জানান, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এর সমান্তরালে দেশের সঞ্চালন ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হয়নি। এখনো পুরাতন আমলের পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। 

ইত্তেফাক/এএইচপি