২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়ের জন্য গৃহীত প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন করাতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে প্রকল্প অনুমোদনে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার মধ্যে পড়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্প অনুমোদনে কিছুটা অনিশ্চয়তাও দেখা গেছে স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যে।
মঙ্গলবার সিইসি জানিয়েছিলেন, ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটের সিদ্ধান্ত হলেও এখনো নিশ্চিত নয়। ইভিএম কেনার প্রকল্প সরকার অনুমোদন করে কি না, তার ওপর বিষয়টি নির্ভর করবে। যথার্থ মনে না করলে সরকার এই প্রকল্প অনুমোদন নাও দিতে পারে।
‘নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন হলে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করবে কমিশন। ইভিএমের পক্ষে স্কুল-কলেজ-মন্দির-মসজিদ-মাদ্রাসায় প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি সংগঠন দিয়ে ইভিএমের পক্ষে প্রচারণা চালাবে ইসি। কিন্তু নতুন প্রকল্প অনুমোদন না পাওয়ায় সবকিছু থমকে আছে। অন্যদিকে ইভিএম বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি-জাতীয় পার্টি-জাপাসহ সরকারবিরোধী অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়ার লক্ষ্যে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করে ইসি। এ প্রকল্পের আওতায় আরো ২ লাখ ইভিএম মেশিন কেনা হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে ইসি সচিবালয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পরিকল্পনা কমিশন ঐ প্রকল্পটি যাচাইয়ে সভা করেনি। তবে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে প্রকল্প যাচাইয়ে সভা আহ্বান করেও পরে বাতিল করা হয়। আগামী সপ্তাহে প্রকল্প যাচাইয়ের সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
একাধিক নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, তপশিল ঘোষণার আগে জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমাদের হাতে সময় আছে মাত্র ১৩ মাস। ইভিএম প্রকল্পটি স্বল্প সময়ের মধ্যে অনুমোদন না হলে আরো ২ লাখ ইভিএম ক্রয় করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ জন্য যতদ্রুত সম্ভব প্রকল্পটি পাশ হওয়া জরুরি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ডিপিপিতে প্রতিটি ইভিএমের মূল্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকার বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ভ্যাটসহ অন্যান্য শুল্ক। সব মিলিয়ে প্রতি সেট ইভিএমের দাম পড়বে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি। প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ইসির ১০টি অঞ্চলে ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করা হবে। ইভিএম পরিবহনের জন্য প্রতিটি থানা ও উপজেলা অফিসে একটি করে গাড়ি কেনার অর্থ ধরা হয়েছে। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ইভিএম ব্যবস্থাপনার জন্য বিপুলসংখ্যক জনবল ও প্রশিক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে। যদিও ইসির সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল বিপক্ষে মতামত দিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনায় ঐ মতামত পালটে ২৯টি দলের মধ্যে ১৭টি পক্ষে মত দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ইভিএমের বিরোধিতাকারী দলের সংখ্যা দেখিয়েছে ১২টি।
প্রতি ইভিএমের পেছনে বাড়তি খরচ লাখ টাকা
২০১৮ সালে যে মেশিন কেনা হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে বর্তমানে সেটির দাম ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ভ্যাট। গতবারের চেয়ে প্রতি মেশিন ক্রয়ে অতিরিক্র খরচ হবে ১ লাখ টাকার বেশি। বর্তমানে চলমান ইভিএম প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালে। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর ইভিএম প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের অধীনেই কেনা হয় দেড় লাখ ইভিএম।