রোববার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ১১ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

মেহেরপুরে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প

আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ০২:৫১

মেহেরপুরে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন ভেন্ডাররা। ট্রেজারিতে স্ট্যাম্পের সংকট থাকায় নিজেরাও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন স্ট্যাম্প। ফলে গত দুই সপ্তাহ ধরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

দ্বিগুণ দামে কালোবাজারে স্ট্যাম্প বিক্রির বিষয়ে জেলা প্রশাসক বললেন, এ বিষয়ে প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে। ভেন্ডারদের দাবি, ট্রেজারি শাখা থেকেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে স্ট্যাম্প সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ যাবত্ মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে সরকারি ১০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের সংকট দেখা দিয়েছে। স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা বারবার আবেদন করলেও জেলা প্রশাসন থেকে কোনো স্ট্যাম্প বরাদ্দ দিতে পারেনি। ভেন্ডারগুলোতে ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প পাওয়া না গেলেও অসাধু কালোবাজারি ভেন্ডারকে প্রকাশ্যে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

৪ অক্টোবর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেহেরপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস, নিমতলা দলিল লেখক সমিতি চত্বরে অবস্থান করে এবং স্ট্যাম্প ভেন্ডার, দলিল লেখক ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে ভোগান্তির কথা জানা গেছে। গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস এসেছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করতে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত স্ট্যাম্প না পেয়ে ঘুরে বেড়ান ভেন্ডারদের খুপরিঘরে। তিনি বলেন, ‘জমি রেজিস্ট্রি করতে এসে এখন পর্যন্ত ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প কিনতে পারিনি। এখানকার কোনো কোনো স্ট্যাম্প ভেন্ডার পাইনি। তবে বিপ্লব পাল নামের এক স্ট্যাম্প ভেন্ডার ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৬০০ টাকা দাম বলল।’ একই কথা বললেন ঐ গ্রামের শুকুর আলী। তিনি বলেন, কোনো যায়গায় স্ট্যাম্প না পেয়ে বাপ্পি পাল নামের এক ভেন্ডারের কাছে গিয়ে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৫০০ টাকা দিয়ে কিনে জমি রেজিস্ট্রি করলাম। সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামের তারিক হোসেন বলেন, ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৬০০ টাকা দিয়েও মেলাতে পারছিলাম না। পরে অনেক কষ্টে নিমতলার একটি কালোবাজার থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে স্ট্যাম্প কিনলাম।

খাইরুল স্ট্যাম্প ভেন্ডারের মালিক খাইরুল ইসলাম ক্যাংকর বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ মেহেরপুর ট্রেজারি থেকে আমাদের নন-জুডিশিয়াল ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প দিতে পারেনি। আমরা জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছি। অথচ কালোবাজারিদের কাছে স্ট্যাম্প মিলছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এটা কী করে সম্ভব হয়? ১০০ টাকার স্ট্যাম্প ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

দলিল লেখক রুহুল আমিন বাবু বলেন, ‘১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প না পেয়ে ২০ টাকা, ৫০ টাকার স্ট্যাম্প দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে আমরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। আগে যেখানে ১০ পাতা লিখতে হতো, এখন সেখানে ১৮-১৯ পাতা লিখতে হচ্ছে। একই কথা জানান দলিল লেখক মতিউর রহমান মতি। তিনি বলেন, সময় লাগছে বেশি। আবার গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা ধরনের কথা শুনতে হচ্ছে। ব্যাংকে গেলেও ব্যাংকের কর্মকর্তারা নানা কথা শোনাচ্ছেন। প্রবীণ দলিল লেখক আব্দুল আজিজ জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে দলিল লিখছি। আমার জীবনে ২০০৮ সালে একবার স্ট্যাম্পের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। আর এ বছর চার মাসের মধ্যে দুই বার স্ট্যাম্পের ঘাটতি দেখা গেল।

এ ব্যাপারে ট্রেজারি শাখার অফিস সহকারী আরেফিন রেজা মোবাইল ফোনে জানান, ট্রেজারিতে স্ট্যাম্প ছিল না, পরে এসেছে। আর সংকট থাকবে না। মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, দু-এক দিনের মধ্যেই সংকট দূর হয়ে যাবে। আমরা চাহিদা দিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে স্ট্যাম্প আমাদের ট্রেজারিতে এসে পৌঁছেছে। সংকটের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিজি প্রেসে স্ট্যাম্প ছাপা হয়। জেলায় স্ট্যাম্পের চাহিদা বেড়েছে এবং বিজি প্রেস থেকে আসতে দেরি হয়েছে। এছাড়া কালোবাজারে স্ট্যাম্প বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ইত্তেফাক/এএইচপি