জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেছেন, যারা জনগণ ও রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশের বিদ্যমান আইন মানা আবশ্যকীয় কাজ। প্রচলিত আইন প্রয়োজনে পরিবর্তন করে যারা জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে ভাণ্ডারিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যেনতেনভাবে শেষ করে বা কাজ না করে ফেলে রেখে নানা দুর্নীতি আশ্রয় নিয়েছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি গতকাল শনিবার দুপুরে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরো বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা জীবনের সঙ্গে কর্মসংস্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর আমরা যত উত্থানপতন দেখেছি তা যদি অন্য দেশে হতো তাহলে তারা পাগল হয়ে যেতেন। আমাদের দেশে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছেন। তাদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে সত্য, কিন্তু স্বাধীনতার সুফল কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত হয়নি। স্বাধীনতার তিন/চার বছরের মধ্যে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ সেনাবাহিনীর শত শত সদস্যকে হত্যা এবং কয়েক হাজার রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, যা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি বলে তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। যদিও তিনি জানতেন তাকে হত্যা করা হতে পারে। যদি আপস করা হতো তাহলে দেশ স্বাধীন হতো না। যারা আত্মসাৎ-চুরির সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে কোনো আপস করা যাবে না। এই দুর্নীতিবাজদের যেমন আইনের আওতায় আনতে হবে, তেমনি তাদের ঘৃণাও করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন। আমাদের জীবনে আমরা চার/পাঁচ বার শিক্ষানীতি ও কারিকুলাম পরিবর্তন হতে দেখেছি। স্বাধীন দেশের উপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষা চালু করা সময়ের দাবি। উন্নয়নশীল দেশে সমস্যা হচ্ছে নতুন নতুন ধারণার উন্মেষ। সময়ের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো শিক্ষাব্যবস্থাকে চালু করা না হলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে না। শিক্ষকদের দায়দায়িত্ব হচ্ছে অন্যায়-অন্যায্য তাকে প্রতিহত করে আগামী প্রজন্মকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আরো বলেন, দেশে গণতন্ত্র থাকলে অনেক সময় আইনের শৈথিল্য দেখা দেয়। পক্ষান্তরে যখন দেশে স্বৈরাচার থাকে ততদিন আইনের কঠোরতা থাকে। যদিও আমরা তা চাই না; আমরা চাই দেশে গণতান্ত্রিক থাকুক, মানুষের ভোটাধিকার থাকুক। জনগণ তাদের পছন্দসই ব্যক্তিদের ভোট দিয়ে সরকারে পাঠাক। স্বাধীনতা হচ্ছে—জীবনমানের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালানোর সুযোগ। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যারা সমাজের নেতৃত্ব দেবেন তাদের অবশ্যই সৎ, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান হতে হবে। তা না হলে, সমাজদেহে অশান্তি দেখা দেয়। ভাণ্ডারিয়াসহ আমাদের অঞ্চল শান্তির প্রতীক। এই পরিবেশ অক্ষুণ্ন থাকায় আমাদের কাজ করতে নানা সুবিধা রয়েছে। তবে এটা মনে রাখতে হবে কাজের উপযোগী যে ঐক্য দরকার তা মাঝেমধ্যে অনুপস্থিত থাকে। তা মাঝেমধ্যে লঙ্ঘিত হয়। অতীতে যেভাবে ৩৬/৩৭ বছর ধরে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করেছি, তা কখনো কখনো বিনষ্ট করার অপপ্রয়াস চলে। যে কোনো মূল্যে এই একতা আমরা ধরে রাখবই। এর জন্য আমাদের যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে কোনো দ্বিধা-সংশয় নেই। এলাকায় যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তার জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা তথা কাজের গুণমান নিয়ে কোনো আপস নাই। যে কোনো প্রকারের বা যেনতেনভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করা বা ফেলে রাখা—এই প্রবণতা বরদাস্ত করা হবে না। কোটি কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়নে দুর্নীতি-আত্মসাৎ-অপচয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ভাণ্ডারিয়াসহ এ অঞ্চলে গত ৩৬ বছরে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রীরা বারবার এসেছেন এবং এসব গুরুত্বপূর্ণ, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আগমন ও পদচারণায় এলাকার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, সড়ক যোগাযোগ, পানি উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা তাদের এ অঞ্চলবাসীর প্রতি সমর্থন-সহানুভূতির কারণে। মানুষ আমাদের কাছে তাদের জীবন-জীবিকার নানা চাহিদা নিয়ে অভিযোগ জানাতে আসে। ধৈর্যের সঙ্গে, সহমর্মিতার সঙ্গে মানুষের কথা এবং দাবি-দাওয়া মনোযোগের সঙ্গে শুনে তা সমাধান করার চেষ্টা করি। যে কারণে জনগণের সঙ্গে আমাদের সেতুবন্ধ তৈরি হয়েছে। জনগণের সঙ্গে এই সম্পর্কের কারণে তাদের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয়কে আমরা মেনে নিতে রাজি নই। যারা জনগণের স্বার্থের পরিপন্থি কাজ করবে বা জনগণের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ-লুণ্ঠন করবে, তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা বদ্ধপরিকর।
ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার শেখ কামাল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত উক্ত মতবিনিময় সভায় ভাণ্ডারিয়ার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমানা আফরোজের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, উপজেলা জেপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল হক মনি জোমাদ্দার, কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহিবুল হোসেন মহিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর গোলাম সরওয়ার জোমাদ্দার, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম তালুকদার উজ্জল, সহ-সভাপতি ও গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. নাসির উদ্দিন খলিফা, প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন, প্রধান শিক্ষক ইবনে মাসুদ ও প্রধান শিক্ষক মানবেন্দ্র মিস্ত্রি। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভাণ্ডারিয়া উপজেলা জেপির সহ-সভাপতি রেজা আহমেদ দুলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খোকন সিকদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হোসেন দুলাল মল্লিক, দপ্তর সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সেলিম, যুব সংহতির উপজেলা আহ্বায়ক রেজাউল হক রেজভি জোমাদ্দার, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির উপজেলা সভাপতি মনির সরদার, যুব সংহতির উপজেলা সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ সরদার প্রমুখ।