ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ (১৯৭০): বিশ্ব ইতিহাসের ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয় ভোলা সাইক্লোনকে। ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় সাইক্লোন। সেই ঝড়ে প্রাণ হারায় অন্তত ৫ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে ১ লাখই ছিল জেলে। বেশিরভাগই জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যায়।
নার্গিস, মিয়ানমার (২০০৮): সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হলো নার্গিস। ২০০৮ সালের মে মাসে মিয়ানমারে আঘাত হানে নার্গিস। এর তাণ্ডবে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। সাড়ে ৪ লাখ ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
ম্যারিয়েন ঘূর্ণিঝড়, বাংলাদেশ (১৯৯১): ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে এই ঘূর্ণিঝড়। এটির ফলে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। প্রাণ হারায় প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। বাস্তুহারা হয়ে পড়ে ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ (১৮৭৬): বরিশালের বাকেরগঞ্জে ১৮৭৬ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। সে সময় ব্রিটিশ শাসনামল চলছিল। ভয়াবহ সেই ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ। বাতাসের তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার, আর সমুদ্রের পানি বয়ে যাচ্ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২০ ফুট ওপর দিয়ে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে যায়। পরে অনাহার ও দুর্ভিক্ষে মারা যায় অসংখ্য মানুষ।
নিনা টাইফুন, চীন (১৯৭৫): চীনে টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। তবে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তেমন হয় না, ফলে সেদেশে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ১৯৭৫ সালে দেশটির হেনান প্রদেশে আঘাত হেনেছিল টাইফুন নিনা, যেটির ভয়াবহতায় প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ। নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ।
হাইফোং টাইফুন, ভিয়েতনাম (১৮৮১): ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে ১৮৮১ সালের অক্টোবর মাসে টাইফুন আঘাত হানে। দেশটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করেছে। সেবার ভিয়েতনামে প্রায় ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
এলাকা ভেদে দুর্যোগের ধরন বোঝাতে ঘূর্ণিঝড়কে হ্যারিকেন, টাইফুন বা সাইক্লোনের মতো ভিন্ন নামে ডাকা হলেও এরা প্রতিবারই নতুন নতুন নামে হাজির হয়। এক সময় ঝড়ের নামকরণ করা হতো অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের ওপর ভিত্তি করে। তবে তা সাধারণের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। তাই বলতে বা জানতে সহজ হবে, আবহাওয়া স্টেশন থেকে ঝড়ের তথ্য সবাইকে জানাতে ও বিপদসংকেত দিয়ে সতর্ক করতে সুবিধা হবে—এমনটা বিবেচনা করেই সহজ নাম দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি পূর্বাভাস অনুযায়ী পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম নির্ধারণ করে। বিভিন্ন দেশ নাম প্রস্তাব করে। সেই তালিকা থেকে চূড়ান্ত করা হয় একেকটি নাম।