কারেন্ট জালের থেকেও ভয়ঙ্কর ‘চায়না দুয়ারি’ জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন নেত্রকোণার কলমাকান্দার জেলেরা। স্বল্প ব্যয়ে ও কম পরিশ্রমে বেশি আয়ের উৎস হওয়ায় জেলেদের কাছে ক্ষতিকারক এ জাল খুব জনপ্রিয় উঠেছে। এতে করে দেশীয় মাছ বিলপ্তির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
জেলার উপজেলা সদরে উব্দাখালী, বাইরা, গুমাই, মঙ্গলেরশ্বরি, মহিষাশুড়া, চিকনমাটিয়া, কয়রাখালী, পেটকিসহ গোড়াডুবা খালের বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যে এই জাল দিয়ে মাছ শিকার করতে দেখা গেছে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এব্যাপারে কোনো ভূমিকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা গেছে, লোহার রডের গোলাকার বা চতুর্ভূজ আকৃতির কাঠামোর চারপাশে চায়না জাল দিয়ে ঘিরে এই ফাঁদ তৈরি করা হয়। ক্ষেত্রভেদে ‘চায়না দুয়ারি’ ৪০ হাত আবার ৬০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। একটি দুয়ারি জাল তৈরিতে ছয় থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এছাড়া বাংলাদেশে প্রচলিত কোনো মৎস্য আইন ও বিধিমালায় সরাসরি ‘চায়না দুয়ারি’জাল নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে মৎস্য রক্ষা সংরক্ষণ বিধিমালায় সাড়ে চার সেন্টিমিটার বা তার থেকে কম দৈর্ঘ্যর পাসবিশিষ্ট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন হাট-বাজারে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনা বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো ‘চায়না দুয়ারি’ জাল দিয়ে ধরা হয়েছে বলেছেন স্থানীয় জেলে ও বাসিন্দারা।
স্থানীয় জেলে ও বাসিন্দারা জানায়, এই ফাঁদ বসালে নদীর পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হয়। এছাড়া এ জালে ছিদ্র ছোট হওয়ায় ছোট বড় কোন মাছ বের হওয়ার সুযোগ নেই। শুধু মাছ নয়, জলজ প্রাণী যেমন, শামুক, ঝিনুক, সাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙসহ প্রায় সবই আটকা পড়ে এই জালে। যখন ডাঙ্গায় জাল শুকাতে দেওয়া হয়, তখন জালে লেগে থাকা মাছ খেতে এসে আটকা পড়ে পাখিরাও।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের চান্দুয়াইল গ্রামের আতিকুর রহমান বলেন, উভয় দিক থেকে ছুটে চলা যেকোনো মাছ সহজেই এতে আটকা পড়ে। একবার যেকোন ছোট বড় মাছ ঢুকলে বের হওয়ার সুযোগ নেই। প্রশাসনের চোখের সামনে অসাধু জেলেরা এভাবে মাছের আবাসস্থল নষ্ট করছেন। এতে সাধারণ জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কলমাকান্দা উপজেলা সদর ইউনিয়নের নয়াপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি কাজল দাস ও গুজাকুলিয়া সমিতির সভাপতি প্রাণকৃষ্ণ দাস জানান, ক্ষুদ্রাকৃতির মাছের পক্ষেও এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এই জাল দেশীয় মাছের বংশ শেষ করে দিচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘চায়না দুয়ারি’ জাল বন্ধে মৎস্য আইনে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। তাই বাজারে এ জাল বিক্রি বন্ধে কারেন্ট জালের মতো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।