পরিবহন ব্যবসা নিয়ে দুই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব। ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক ব্যবহার করা নিয়েই এই ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই এক পক্ষ কোনো ধরনের মামলা না করেই হাইকোর্টের জাল আদেশ সৃজন করেছেন। যাতে অপর পক্ষকে ওই জাল আদেশ দ্বারা ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই জাল আদেশ প্রস্তুতের ঘটনা এসেছে উচ্চ আদালতের নজরে।
এ ধরনের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে জাল আদেশ প্রস্তুতের সঙ্গে কারা জড়িত তা তদন্তের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে বাদী ও বিবাদীসহ চারজনকে তলব করেছেন আদালত। আদালতের আদেশের বিষয়টি ইত্তেফাককে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট শেখ সাইফুজ্জামান।
হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হলেন আলহাজ্ব মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। আর হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি হলেন আনিসুল ইসলাম। পরিবহন ব্যবসায় জড়িত এই দুই কোম্পানি ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এই ‘হানিফ’ এর ট্রেডমার্ক নং: ১৭৪৬৭। কিন্তু গত ২৩ অক্টোবর বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চের দুই বিচারপতির নাম উল্লেখ করে একটি জাল আদেশ প্রস্তুত করা হয়। ওই জাল আদেশের রিট আবেদনের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ১৫৩২১/ ২০২২। রিট আবেদনকারী হলেন হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেড। বিবাদী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস এর ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবং হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি আনিসুল ইসলামকে। আদেশে ওই বেঞ্চের সরকারি আইন কর্মকর্তা হিসাবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা বেশ কয়েক বছর আগেই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া আদেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নামের বানানও ভুল লেখা হয়েছে।
জাল আদেশে বলা হয়েছে, হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেড যেন ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক তার পরিবহনে ব্যবহার করতে না পারেন সেই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। গত ১৬ অক্টোবর হানিফ পরিবহন সার্ভিস লিমিটেডের করা আবেদনটি ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে জাল আদেশে।
জাল আদেশের একটি ফটোকপি ওই বেঞ্চে বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) শেখ সাইফুজ্জামানের কাছে আসে। এরপরই জালিয়াতির বিষয়টি বেঞ্চের নজরে আনেন তিনি। ওই জাল আদেশের কপি দেখে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বেঞ্চের বিচারপতিগণ।
আদালত বলেছেন, মামলার কোন অস্তিত্ব নাই। অথচ জাল আদেশ সৃজন করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা বিনষ্ট হয়। এরপরই হাইকোর্ট তলবের পাশাপাশি জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন।
ডিএজি শেখ সাইফুজ্জামান বলেন, আমাদের হাইকোর্টের এই বেঞ্চের মোশন পাওয়ার ছিলো না। শুধু রুল শুনানির এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের আদেশ প্রদান করতে হলে মোশন শুনানির এখতিয়ার থাকতে হয়।
তিনি বলেন, জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কোন চক্র এই আদেশের কপি সৃজন করেছে। এ ধরনের ঘটনা বন্ধে হাইকোর্টের নকল শাখার কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত কিনা তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বলেছে হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, ট্রেডমার্ক বা ব্যবসা স্বত্ত্ব হল একটি চিহ্ন বা প্রতীক যা দ্বারা একটি প্রতিষ্ঠান বা উৎস থেকে আগত পণ্য বা সেবা থেকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা উৎসের পণ্য বা সেবা পৃথক করা যায়। সাধারণত, পণ্যের মোড়কের গায়ে বা অন্যান্য কাগজপত্রে ট্রেডমার্ক অঙ্কিত থাকে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্থাপনায় এটি দেখা যায়।