উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১৫ নভেম্বর। গত বছরের এই দিনে রাজশাহী শহরে নিজ বাসভবনে ৮২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন তিনি।
প্রয়াত হাসান আজিজুল হক মৃত্যুর আগে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। অবস্থা গুরুতর হলে ২০২১ সালের ২১ আগস্ট তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয়েছিল। সেখানে দুই সপ্তাহের বেশি সময় চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে তাকে রাজশাহীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও আগে থেকেই তার হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস ছিল।
হাসান আজিজুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখে গেছেন। তার রচিত জনপ্রিয় গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য', 'আত্মজা ও একটি করবী গাছ', 'জীবন ঘষে আগুন', 'নামহীন গোত্রহীন', 'পাতালে হাসপাতালে', 'আমরা অপেক্ষা করছি', 'রোদে যাবো', 'রাঢ়বঙ্গের গল্প' ইত্যাদি। আগুনপাখি ও শামুক যথাক্রমে তাঁর রচিত প্রথম ও শেষ উপন্যাস। তার লেখা গল্পসমূহ হিন্দি, উর্দু, রাশিয়ান, জাপানিজ ইত্যাদি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালে ভারতের বর্ধমান জেলার যব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক এবং ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৪ সালে ৩১ বছর অধ্যাপনার পর অবসরগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৬০ সাল থেকে তিনি কয়েকটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ হিসেবে যোগদান করেন।
প্রয়াত হাসান আজিজুল হক ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে একুশে পদক ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এর পাশাপাশি তিনি লেখক শিবির পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ২০১৮ সালে 'সাহিত্যরত্ন' উপাধি লাভ করেন। ২০১২ সালে ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সন্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।
হাসান আজিজুল হক রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় ১৯৬০ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘শকুন’ শিরোনামে তার একটি গল্প প্রকাশিত হয়। এই গল্পের মাধ্যমেই সাহিত্যিক মহলের নজরে আসেন তিনি। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একটানা ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। এরপর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নগরীর চৌদ্দপায় আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন।