মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শিল্পে ১২০টি নতুন সংযোগ ঝুলে আছে

চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিডের গ্যাস বরাদ্দ কমেছে

আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২২, ০১:৫৪

জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস বরাদ্দ নিয়ে ‘বৈষম্যের’ অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, চরম সংকটের মধ্যে চট্টগ্রামে বরাদ্দ আরো কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে সিইউএফএল সার কারখানা বন্ধ থাকায় সেই গ্যাস চট্টগ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, সিইউএফএল চালু অবস্থায় চট্টগ্রামে ২৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ দেওয়া হতো। এখন বরাদ্দ কমিয়ে ২৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। ফলে চরমে সংকট রেখে এলএনজি চট্টগ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়ায় সংকট আরও প্রকট হয়েছে।

ছবি- সংগৃহীত

এলএনজি আমদানি শুরু হওয়ার সময় জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চট্টগ্রামে চাহিদা পূরণের পর এলএনজি বাইরে সরবরাহ দেওয়া হবে। বর্তমানে এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ায় মহেষখালী টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। তার থেকে চট্টগ্রামে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সংকটের মধ্যে সংকট আরও বাড়িয়ে এলএনজি চট্টগ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চলতি মাসের শুরু থেকে চট্টগ্রামে এমনিতে গ্যাসসংকট বিরাজ করছে। গ্যাসসংকটের কারণে চট্টগ্রামে বৃহৎ গ্যাস ব্যবহারকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু কাফকো ও সিইউএফএল চালু রাখা হয়। এই দুটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালুর পর চট্টগ্রামে শিল্প ও বাণিজ্যিক আবাসিক খাতে পাইপলাইনে চাপ কমে যায়। এতে শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদনে ধস নামে। দিনের অর্ধেক সময় আবাসিকেও রান্নার চুলা জ্বলছে মিটমিট করে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সিইউএফএল সারকারখানায় সৃষ্ট আগুনে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সিইউএফএলে দৈনিক ৪২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হতো। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামে আরও প্রায় ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়। 

ছবি- সংগৃহীত

কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা জানান বরাদ্দ ঠিক রাখা হলে অন্তত পক্ষে শিল্পকারখানা ও আবাসিকে গ্যাসের চাপ কিছুটা উন্নতি হতো। শিল্প এলাকাগুলোতে অনেকেই ডিজেল দিয়ে বয়লার চালাচ্ছেন। এতে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের উৎপাদন খরচ।

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, এখন গ্যাসসংকট থাকায় এক দিকে বাড়ালে অন্য দিকে কমাতে হয়। সিইউএফএল বন্ধ হওয়ার পর আশুগঞ্জ সারকারখনায় গ্যাস বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। দেশে চাহিদার প্রয়োজনে সারকারখানায় উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বকেয়ার কারণে চট্টগ্রামে বিভিন্ন খাতে প্রায় দেড়শ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এসব গ্রাহক তাদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করে সংযোগ পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, আবাসিকে অনেকেই ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে পুনঃসংযোগ ও নাম পরিবর্তন করার অভিযোগ উঠেছে। 

ফলে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন কেজিডিসিএলকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, নীতিমালার আলোকে গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধির জন্য পুনঃসংযোগের ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাইবাছাই করে সংযোগ দেওয়ার জন্য। এখন এই চিঠির পর যারা ২০-৩০ বছর আগে সংযোগ নিয়েছেন তারা জমির দলিল, খতিয়ান, খাজনার রসিদ, সিডিএর প্ল্যান, বিদ্যুৎ বিলসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে সংযোগ নিয়েছেন। এখন পুনঃসংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছে আবার এসব কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে। এখন কোনো গ্রাহক সব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিল জমা দেননি। তাকেও সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া কর্মকর্তাদের কাগজপত্র তদারকিতে সমন্বয়হীনতায় হয়রানি পোহাতে হচ্ছে বলে একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন।

ছবি- সংগৃহীত

চট্টগ্রামে বর্তমানে শিল্পে নতুন গ্যাসসংযোগ চালু রয়েছে। শিল্পের ১২০টি নতুন সংযোগের আবেদন দীর্ঘদিন যাবত ঝুলে রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু শিল্পে নতুন সংযোগ ও কিছু শিল্পে বর্ধিত ইউনিটের জন্য লোড বৃদ্ধির সংযোগ। অনেকেই চাহিদাপত্রের টাকাও পরিশোধ করেছেন। কিন্তু বোর্ডে অনুমোদন না হওয়ায় সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এসব শিল্পের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, রি-রোলিং মিল, গার্মেন্টস, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি ফিলিং স্টেশনসহ রপ্তানিমুখী নানা শিল্প কারখানা। এসব শিল্পোদ্যোক্তারা শিল্পের জন্য মেশিনারি যন্ত্রপাতি আমদানি করে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। কারখানার অবকাঠামো নির্মাণও শেষ করেছেন। কিন্তু গ্যাসের জন্য উৎপাদন শুরু করতে পারছেন না।

ইত্তেফাক/এমএএম