কক্সবাজারের টেকনাফে দালালের খপ্পড়ে পড়ে ১৯ জন দেড় মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। এখন পর্যন্ত তাদের সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের মধ্যেই স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
নিখোঁজরা হলেন-টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন ঝিমংখালি ৫নম্বর ওয়ার্ড আব্দুল করিম (১৯), জাহাঙ্গীর আলম (১৪), মো. আরমান (১৬), শামসু আলম (২০), মো. রিদুয়ান (১২) এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ড লাতুরিখোলা এলাকার মো. রিদুয়ান (১৬), শাহ আলম (২২), রহমত উল্লাহ (১৮), আব্দু কাদের (৩০), নুর আহমদ (২৫), মো. ইব্রাহিম (২০), কামাল হোসেন (১৬), জসিম (৩০), বেলাল হোসেন (১৮), মো. জুবায়ের (২০), জাফর আলী (৩০), হায়দর আলী (২৫),আবুল বশর (৪০) ও কামাল হোসেন (১৮)।
নিখোঁজ মো. রিদুয়ানের মা আসমা আক্তার (৩৬) বলেন, গত ২০ অক্টোবর রিদুয়ান স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। এরপর সেই আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। সপ্তাহখানেক পর একটা কল আসলো মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য দালালরা তাকে আটকিয়ে রেখেছে। তার আতর্নাদ শুনে স্বর্ণ বিক্রি করে ও মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ধাপে ধাপে এক লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়েছি। কিন্তু এরপর আর কোনো খবর পাইনি।
নিখোঁজ আবুল বশরের স্ত্রী আছিয়া খাতুন বলেন, তার স্বামী আবুল বশর টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় কাপড় বিক্রি করতেন। প্রতিদিনের মত ২০ অক্টোবর কাপড় বিক্রির জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পাঁচ দিন পর বাড়িতে কল করে স্বামী নিখোঁজ মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য টাকা দেওয়ার জন্য বলে। স্বামীর কথামতে, এক লাখ ২০ হাজার টাকা জোগাড় করে দালালের দেওয়া বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠাই। এরপর তার আর কোন খোঁজ পাইনি। তবে দেড় মাস পর খবর পায় মিয়ানমারের ভাষায় লেখা এক ফেসবুক আইডিতে একটি যৌথ ছবিতে আবুল বশরের ছবি দেখা গেছে। তবে সেটা কোন জায়গায় নিদিষ্টভাবে বুঝা যায় না।
ভুক্তভোগী অন্য পরিবারগুলো জানায়, দালালদের প্রতারণায় পড়ে পরিবারের অজান্তে বাড়ি থেকে বের হয়েছে অনেকেই নিখোঁজ হয়। তবে নিখোঁজদের ভালোর কথা চিন্তা করে স্বজনদের কেউ ৫০ হাজার, কেউ এক লাখ আবার কেউ ১ লাখ ২০ হাজার করে মোট ১৫ লাখ টাকা দালালদের দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
তবে ভুক্তভোগী কিছু পরিবার টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বরাবর দরখাস্ত জমা দিয়েছেন।
এব্যাপারে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেক যুবক দালালের খপ্পড়ে পড়ে মানব পাচারের শিকার হয়েছে। অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এবং অনেকেই মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি আছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
এবিষয়ে ইউএনও মো. কামরুজ্জামান বলেন, মানবপাচারে শিকার হওয়া ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু দরখাস্ত পেয়েছি। আমরা কাগজগুলো পর্যালোচনা করে সেগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাবো।
এঘটনার সঙ্গে জড়িত দালালদের সঠিক তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।