শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এসএসসি : রাজধানীর অনেক স্কুলের ফল হতাশাজনক

আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০২

বলা হয়ে থাকে ঢাকার স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সব ধরনের সুবিধা রয়েছে, এ কারণে দেশসেরা ফলাফল করে। তাই ঢাকার স্কুলে ভর্তির জন্য নানামুখী চেষ্টা চলে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকা মহানগরীর হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান বাদে অধিকাংশের পড়াশোনার মান ভালো নয়। আর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান নেই বললেই চলে। ঐ স্কুলগুলো কীভাবে চলছে তার কোনো খোঁজও রাখেন না শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুলে আসে কিনা, শিক্ষকদের মান কেমন, ঠিকমতো ক্লাস হয় কিনা সেটাও দেখার কেউ নেই। এ কারণে পাবলিক পরীক্ষায়ও তেমন ভালো ফল নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাশের হার দিয়ে শিক্ষার মান বোঝা যায় না, জিপিএ-৫-এর হার দিয়ে এটা বোঝার সুযোগ আছে।

ঢাকা মহানগরীতে অনুমোদিত ৪৬২টি স্কুল রয়েছে, যেখান থেকে প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। এর বাইরে আরো কয়েক শ অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা অন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের নামে তাদের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করিয়ে থাকে। গত সোমবার প্রকাশিত এসএসসির ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবার ঢাকা মহানগরীর ৪৬২টি স্কুল থেকে ৯৫ হাজার ১৩১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। পাশ করে ৯৪ দশমিক ১১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ হাজার ৩০ জন।

এবার ঢাকা বোর্ডে পাশের হার ৯০ দশমিক ০৩ শতাংশ। যেখানে ঢাকা মহানগরীর পাশের হার ৯৪ দশমিক ১১ শতাংশ। ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানই ঢাকার পাশের হার ও জিপিএ-৫-এর হার বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২ হাজার ৬৭১ জন পরীক্ষা দিয়ে ২ হাজার ১৮২ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাশের হার ৯৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে ২ হাজার ৩০৬ জন পরীক্ষা দিয়ে ২ হাজার ২৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাশের হার ৯৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩ হাজার ৫৬১ জন পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৩০৯ জন। পাশের হার ৯৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে ৫২০ জন অংশ নিয়ে ৪৫৭ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে। এছাড়া মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি হাইস্কুল, আদমজী ক্যান্টমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজেও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার বেশি। পাশাপাশি পাশের হারও বেশি। 

অন্যদিকে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র ঠিক উলটো। তথ্য হিসাব করে দেখা গেছে, গুলশান থানার আওতাধীন ১১টি স্কুল রয়েছে। এই থানাধীন টিঅ্যান্ডটি বয়েজ হাইস্কুল থেকে ৪৩ জন পরীক্ষা দিয়ে এক জনও জিপিএ-৫ পায়নি। আইপিএইচ হাইস্কুল থেকে ১৮৬ জন পরীক্ষা দিয়ে মাত্র তিন জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ফেল করেছে ৩৫ জন।

মোহাম্মদপুরের মিশন ইন্টারন্যাশনাল থেকে ৩২৩ জন পরীক্ষা দিয়ে মাত্র তিন জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮০ জনই ফেল। সানওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাত্র ১৩ জন পরীক্ষা দিয়েছে। উদয়ন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাত্র ১২ জন পরীক্ষা দিয়েছে। জিপিএ-৫ পায়নি এক জনও। একই অবস্থা স্টামফোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা বালুখান্দা পি জি হাইস্কুলের।

একইভাবে সবুজবাগ থানার কমলাপুর হাইস্কুল থেকে ২৫২ জন পরীক্ষা দিয়ে ফেল করে ৬৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ছয় জন। ধর্মরাজিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৯০ জন পরীক্ষা দিলেও এক জনও জিপিএ-৫ পায়নি। পাইকপাড়া স্টাফ কোয়ার্টার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৯ জন ফেল করেছে। জিপিএ-৫ পায়নি এক জনও। সূত্রাপুরের এমপিওভুক্ত রোকনপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার মাত্র ১০ জন পরীক্ষা দিয়েছে। এর মধ্যে আবার এক জন ফেলও করে। জিপিএ-৫ পায়নি এক জনও। বংশাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫১ জন পরীক্ষা দিয়ে সাত জন ফেল করে। জিপিএ-৫ পায়নি এক জনও। ওয়ারী হাইস্কুল থেকে ৫৪ জন পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র এক জন।

গ্র্যাজুয়েটস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩৩ জন পরীক্ষা দিয়ে এক জনও জিপিএ-৫ পায়নি।  সূত্রাপুরের রামকৃষ্ণ হাইস্কুল থেকে ২০ জন পরীক্ষা দিয়ে এক জনও পাশ করেনি।  কমলাপুর রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৬০ জন পরীক্ষা দিয়ে এক জনও জিপিএ-৫ পায়নি। মতিঝিল থানাধীন রয়েল স্কুল থেকে মাত্র ১১ জন পরীক্ষা দেয়। এর মধ্যে তিন জন ফেল করে। জিপিএ-৫ পায়নি এক জনও।

ঢাকা মহানগরীর শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ভালো ফল এক দিনে হয় না। এ জন্য প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সমন্বয় দরকার। যারা ভালো করছে না তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আর সরকারি দপ্তরগুলোর মনিটরিং দরকার বলে মনে করেন এ শিক্ষক।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার বলেন, ঐ সব প্রতিষ্ঠানে ভালো মানের শিক্ষার্থী ভর্তি হয় না। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়টি মনিটরিং করে না। এ কারণে ঐ সব প্রতিষ্ঠান ভালো করতে পারে না।

 

 

ইত্তেফাক/ইআ