বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, উন্নত গণতন্ত্রের অভাবে সমাজে বৈষম্য তৈরি হয়। এর ফলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুবিধা সাধারণ নাগরিকরা সমহারে পায় না। এটা বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই প্রযোজ্য।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের সভাপতির বক্তব্যে সেন্টর ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান এ কথা বলেন।
বাংলাদেশে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদেশের ৮০ ভাগ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের রাজনীতিবিদরা ব্যবসায়ী। বৈষম্যপূর্ণ সমাজ এই বৈষম্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে। এ দেশে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। জনগণের জন্য সরকারের ব্যয় যথেষ্ট কম। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে। এজন্য কোনো কৌশলই দারিদ্র্য কমাতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম ব্যর্থ হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। কোনো সরকার রষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে কাজ করেনি। সেই সুযোগ নিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি খাত রাষ্ট্রীয় সহায়তাসহ ব্যাংকিং সহায়তা পেয়েছে। মন্ত্রীরা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দোষ দিচ্ছেন অথচ দায় হচ্ছে সরকারি ব্যবস্থাপনার। একই অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ‘গণতান্ত্রিক উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সমাজতন্ত্রের পুনর্বিবেচনা’ বিষয়ে তিনি উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
এ সময় বৈষম্য কমাতে গণতন্ত্রের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং বাজার অর্থনীতিতে চীনের প্রবেশ কমিউনিস্ট অর্থনীতির ব্যর্থতার প্রমাণ। এসব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, বাজার ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। কারণ, সম্পদের একছত্র মালিকানা অন্যায্য এবং সামাজিক সুবিচারের পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, কিছু বড় বড় শিল্প গ্রুপের মুনাফা অর্জনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকলেও তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপি হয়ে যায়। এর একটা কারণ হলো, অবৈধভাবে বিদেশে মুনাফা পাচার। এক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে বার বার ঋণ পুনঃতপশিলীকরণ, সুদ মওকুফ ইত্যাদি সুবিধা দিতে হয়। কিন্তু এর পরিবর্তে সরকার আর্থিক সহায়তার অংশ হিসেবে মুনাফা অর্জনকারী কোম্পানিগুলোর কিছু শেয়ার সমমূল্যে অর্থাৎ শেয়ারপত্রে উল্লেখিত দামে কিনে নিতে পারে। এছাড়া ভালো কোম্পানি বাজারে শেয়ার ছাড়লেও সরকার আইন করে তার কিছু অংশও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উল্লেখিত দামে কিনে নিতে পারে। বিনিয়োগের বাধা হিসেবে ব্যবসার পরিবেশের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি, বিশেষ করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাই তুলনামূলকভাবে এর বেশি ভুক্তভোগী।