শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষায় কক্সবাজার, সর্বত্র সাজ সাজ রব

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:০১

স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ সাত বছর পর জনসভায় যোগ দিতে ৭ ডিসেম্বর (বুধবার) কক্সবাজার আসছেন। দলীয় ও সরকার প্রধানের আগমন উপলক্ষে কক্সবাজারজুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। পৌরসভা, রামু, ঈদগাঁও, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে মানুষের নগরী হয়ে উঠবে কক্সবাজার। প্রধানমন্ত্রীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে নানা প্রস্তুতি। 

৭ ডিসেম্বর সকালে কক্সবাজার সৈকত ঘেঁষা মেরিন ড্রাইভের ইনানী-পাটোয়ারটেক সৈকত এলাকায় অনুষ্ঠিতব্য তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়ার উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত নৌশক্তি মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ তিন ডজনেরও বেশি দেশ অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।

নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়া শেষে একইদিন বেলা আড়াইটায় সৈকতের লাবনী পয়েন্টের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপতি। সভাস্থলে প্রধানমন্ত্রীর মুল মঞ্চটি হবে নৌকা আকৃতির। এর সাথে থাকছে ৪টি উপ-মঞ্চ। যেখানে কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা নেতৃবৃন্দ পৃথকভাবে অবস্থান নেবেন। একই সঙ্গে উদ্বোধন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য থাকবে আলাদা মঞ্চ।

এর আগে ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে এসে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দলীয় জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এবারের সফরকে ঘিরে পুরো শহর সাজানো হচ্ছে নানা আঙ্গিকে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ড-পোস্টারে ছেয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন সড়ক, উপ-সড়ক। চলছে ভাঙাচোরা সড়কের সংস্কার, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সড়কে লাইটিং ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। বিমানবন্দর হয়ে সার্কিট হাউস ও হলিডে মোড় হতে সৈকত এলাকায় থমকে থাকা প্রধান সড়ক পাকাকরণ কাজ শেষ হয়েছে দু'দিনেই।

ইতিমধ্যে জনসভাস্থলের সার্বিক প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। দিন-রাত্রি টানা চলছে এর সার্বিক প্রস্তুতি। সভাস্থলের আশে-পাশে তোরণ নির্মাণ, ব্যানার প্যাস্টুন দেখা যাচ্ছে সপ্তাহ আগে থেকে।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, দেশের অন্য এলাকার চাইতে কক্সবাজারে বেশি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্প, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, মেরিন ড্রাইভ প্রসস্থকরণ, সাব মেরিনের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্প, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, সাবরাং এক্সক্লেুাসিভ ট্যুরিজম জোন, মহেশখালী এল.এম.জি টার্মিনালসহ অসংখ্য মেগা প্রকল্পের কারণে প্রধানমন্ত্রীর এবারের জনসভার গুরুত্ব অনেক। এসব প্রকল্পের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানাতে লাখো জনতা জনসভাস্থলে আসবে।

তিনি আরো জানান, কেবল সভাস্থল নয়; আশে-পাশ এবং পুরো শহরই লোকরণ্য হবে।  স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে আড়াই লাখের বেশি মানুষের অবস্থান যোগ্য। সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, বাহারছড়ার মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, হলিডের মোড়, শহীদ সরণী, কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোন হয়ে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত ৪ লাখের বেশি মানুষ জমায়েত হওয়ার আশা করছি। এজন্য পুরো এলাকা জুড়ে দুই শতাধিক মাইক লাগানো হচ্ছে।

জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম চৌধুরী বলেন, সকাল ১০টা থেকে শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মানুষ সমাগম শুরু হবে। দূরের উপজেলা থেকে আগের দিন অনেকে কক্সবাজারে আসবেন। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফার উপস্থিতিতে দলীয় নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে শহরের কলাতলীর 'জ' ভাস্কর্য মোড় পর্যন্ত পাঁচ-ছয় কিলোমিটার সড়কে তোরণ নির্মাণের ধুম পড়েছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক তোরণ তৈরি হয়েছে। শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভেতরে চলছে জনসভায় বিশাল মঞ্চ তৈরির কাজও।

জনসভা সফল করতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর সফর নিরাপদ করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

শনিবার কক্সবাজার শহর ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে কলাতলী সৈকত সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ব্যানার-বিলবোর্ড টাঙিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার জেলা পরিষদ, হোটেল মালিক, জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. খোরশেদ আলম বলেন, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর ও  মাতারবাড়ীতে সমাপ্তির পথে দেশের বৃহৎ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী অক্টোবর নাগাদ শেষ হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ১০ হাজার ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যের কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের নির্মাণকাজ। টেকনাফ সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, সোনাদিয়ায় পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, খুরুশকুলে পাঁচ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর জন্য ফ্ল্যাটবাড়ির বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে  কক্সবাজারের চেহারা। না চাইতেই কক্সবাজারের মানুষকে এত কিছু দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাই সবাই শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে মুখিয়ে আছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে প্রস্তুতি শেষ করছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকল প্রকার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। 

ইত্তেফাক/ইআ