অধিকৃত পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জুড়ে ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও অবৈধ বসতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়াও, সাম্প্রতিক নির্বাচনে ইসরায়েলের সাবেক কট্টরপন্থী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আবার জয়ী হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও সংযুক্ত করার আশঙ্কাও বেড়েছে। ক্ষমতায় আসার আগেই নেতানিয়াহুকে এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করলো যুক্তরাষ্ট্র। খবর এনডিটিভির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম তীরে দখল ও জমি দখলের বিরোধিতা করার অঙ্গীকার করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বা অধিকৃত পশ্চিম তীরে সংযুক্তির বিরোধিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় ফিরে আসার পর তিনি এ কথা বলেন।
দেশটির সাবেক কট্টরপন্থী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলে ১ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হন। এছাড়া ক্ষমতায় আসতে তিনি অবৈধ বসতি স্থাপনের পক্ষে চরম ধর্মান্ধ ও দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। নেতানিয়াহুর জোটের চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে 'রিলিজিয়াস জায়োনিজম' নামের একটি দল।
এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনরা আশঙ্কা করছে, নেতানিয়াহুর অধীনে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে আরও অবৈধ ইসরায়েলি বসতি গড়ে উঠবে। এর আগে নেতানিয়াহু ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ১২ বছর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময়কালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি অবৈধ বসতি স্থাপনের রেকর্ড সম্প্রসারণ হয়েছিল।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এই ধরনের অবৈধ ইসরাইলি বসতি আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। সঙ্কটের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের অংশ হিসেবে এটি একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বাধা হিসাবে বিবেচিত হয়।
এদিকে নেতানিয়াহুর সঙ্গে জোটবদ্ধ চরমপন্থি গোষ্ঠী 'রিলিজিয়াস জায়োনিজম' ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণকে সমর্থন করে। তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের তদারকির জন্য নেতানিয়াহুর নতুন জোটকেও একটি পদ দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন রোববার (৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থী ইসরায়েলপন্থী অ্যাডভোকেসি গ্রুপ জে স্ট্রিটের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যদিও ওয়াশিংটনের পূর্ববর্তী গণতান্ত্রিক প্রশাসনের সঙ্গে প্রবীণ ইসরায়েলি নেতার সম্পর্ক ছিল খুবই বিরোধপূর্ণ।
রোববার ব্লিংকেন বলেন, 'আমরা সরকারের মানগুলোকে পৃথকভাবে নয়, তারা যে নীতিগুলো অনুসরণ করে তার মাধ্যমে পরিমাপ করব। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে নিরলসভাবে কাজ করবে। আমরা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ণ করে এমন যেকোনো পদক্ষেপের দ্ব্যর্থহীনভাবে বিরোধিতা করব। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ, পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সংযুক্ত করার দিকে পদক্ষেপ, পবিত্র স্থানগুলোর ঐতিহাসিক মর্যাদা ব্যাহত করা, ধ্বংস এবং সহিংসতার প্ররোচনা।'
বাইডেন প্রশাসন এলজিবিটিকিউ জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ইসরায়েলের সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচারের সমান প্রশাসনসহ মূল গণতান্ত্রিক নীতিগুলোর উপর জোর দেবে বলে জানান তিনি।
নেতানিয়াহুর অতি-ডান জোটে নোয়াম নামে একটি দলও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যার নেতা আভি মাওজ এলজিবিটিকিউ অধিকারের কট্টর বিরোধী। এছাড়াও নেতানিয়াহুর জোটের আরেক অংশীদার কট্টরপন্থী ইহুদি শক্তি পার্টিও অবৈধ বসতি সম্প্রসারণকে সমর্থন করে।
ইহুদি শক্তি পার্টির নেতা ইতামার বেন-গাভির গত বছর পর্যন্ত একজন ফিলিস্তিনি বিরোধী ধর্মীয় অতি ডান উস্কানিকারী হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। তাকে ২০০৭ সালে অ্যান্টি-এলজিবিটিকিউ অ্যাক্টিভিজম, সেইসঙ্গে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী উস্কানি ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
বেন-গভির অবশ্য জানিয়েছিলেন, তিনি আর সব ফিলিস্তিনিকে বহিষ্কারের পক্ষে নন। তবে তিনি কেবল সেই ফিলিস্তিনিদের বহিষ্কারের পক্ষে যারা বিশ্বাসঘাতক বা সন্ত্রাসী বলে বিবেচিত হবে।