শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বাড়াতে সৌদি আরব যাচ্ছেন শি

আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:৩৯

জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মৈত্রী ক্ষয় হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর তেলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রিয়াদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিদ্যমান দূরত্ব উত্তেজনায় পরিণত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে বেইজিং ও রিয়াদের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যেই সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। খবর সিএনএনের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি সপ্তাহেই এই সফর হতে পারে। আগামী বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) তিনি মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে পৌঁছাতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ সফরের সময় একটি চীন-আরব শীর্ষ সম্মেলন হবে। সম্মেলনে ১৪টি আরব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া দুই দিনের সফরে চীন-জিসিসি সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে বড় মিত্র সৌদি আরব সফরের গুঞ্জন কয়েক মাস ধরে শোনা যাচ্ছিল। তবে সৌদি আরব ও চীন সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।

গত সপ্তাহে সৌদি সরকার সঠিক তারিখ নিশ্চিত না করেই শীর্ষ সম্মেলন কভার করার জন্য সাংবাদিকদের নিবন্ধন ফর্ম পাঠিয়েছে। এছাড়াও শি জিনপিংয়ের সফর ও নির্ধারিত শীর্ষ বৈঠক সম্পর্কে তথ্যের জন্য সিএনএন দ্বারা যোগাযোগ করা হলে সৌদি সরকার মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তেল উৎপাদন কমানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। সাড়ে নয় মাসের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত। রাশিয়ার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করছে পশ্চিমা দেশগুলো।

সম্প্রতি শীর্ষ তেল উৎপাদকদের জোট ওপেক প্লাস দৈনিক ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন কমাতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। যা ২০২০ সালের পর সর্বোচ্চ। এছাড়া ওপেক প্লাস তেল উৎপাদন কমানোর এই হার বিশ্বব্যাপী সরবরাহের প্রায় ২ শতাংশের সমান।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র তেল উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করলেও সৌদি আরবের নেতৃত্বে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

মার্কিন মিত্র হওয়া সত্ত্বেও রিয়াদের সিদ্ধান্ত কার্যত হয় রাশিয়ার পক্ষে। এটি বাইডেন প্রশাসনকে ক্ষুব্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব এখনও তেল উৎপাদন নিয়ে উত্তপ্ত বিরোধে রয়েছে। তেল উৎপাদন কমানোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের জুলাই মাসে সৌদি আরব সফর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি সাংবাদিক জামাল খাশোগির ২০১৮ সালের হত্যাকাণ্ড তুলে ধরেন। বাইডেন জানান, সৌদি আরবের এই নেতা মার্কিন ভিত্তিক সাংবাদিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

অবশ্য শুধু সৌদি আরব নয়, চীনের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন চলছে। এছাড়া ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ নিয়ে চীন ও সৌদি আরব পশ্চিমাদের চেয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে।
উভয়ই রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করা থেকে বিরত রয়েছে। 

রিয়াদ বারবার জানিয়েছে, মস্কো বর্তমান বিশ্বের প্রধান জ্বালানি-উৎপাদনকারী অংশীদার যার সঙ্গে ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরামর্শ করতেই হবে।

এছাড়াও, কিছু মার্কিন কর্মকর্তা সৌদি আরবকে রাশিয়ার পাশে থাকার এবং গত মাসে ব্যাপক তেল উৎপাদন কমানোর পর ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সহায়তা করার অভিযোগ করেছেন। তবে সৌদি কর্মকর্তারা তেল সরবরাহ কমিয়ে রাশিয়ার পাশে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

ইত্তেফাক/ডিএস