নেদারল্যান্ডের কমলা এবং আর্জেন্টিনার সাদা-আকাশী ডোরাকাটা জার্সির দিকে তাকালেই মনে পড়ে যাবে বিশ্বকাপের অনেক অতীত স্মৃতি। সেই দুই দলই আজ আরও একবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।
বাংলাদেশ সময় আজ দিবাগত রাত ১ টায় লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামছে বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার আর্জেন্টিনা। এই পর্যন্ত দুইবার বিশ্বসেরার মুকুট উঠেছে আর্জেন্টিনার মাথায়। অন্যদিকে, তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও একবারও শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে পারেনি নেদারল্যান্ড।
আজ কোয়ার্টার ফাইনালে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি বনাম ডাচ অধিনায়ক ভার্জিল ভ্যান ডাইকের লড়াই। এই ম্যাচের আরেকটি মজার দিক হচ্ছে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে কম বয়সি কোচের বিপক্ষে সবচেয়ে বয়স্ক কোচের দ্বৈরত।
প্রথমবারের মতো বড় আসরে কোচের দায়িত্ব পালন করতে আসা ৪৪ বছর বয়সী আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি মুখোমুখি হবেন ৭১ বছর বয়সি ডাচ কোচ লুইস ফন গালের।
প্রতিবারের মতো এবারও বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাতার এসেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা অন্যদিকে, চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলতে না পারলেও এবার ডাচদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বি।
কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে অবশ্য বেশ সাবলীল ভাবেই নক-আউট পর্বে উঠেছে ডাচরা। গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলোয় পৌঁছানো দলটি যুক্তরাষ্ট্রকে খুব সহজেই হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। সমালোচকরা দুর্বল বললেও ক্রমেই কার্যকরী হয়ে উঠছে ডাচদের আক্রমণভাগ। ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে মেমফিস ডিপাইয়ের ফিটনেস। এছাড়া, কোডি গাকপো এখন ডাচ আক্রমনভাগে আতঙ্কের এক নাম।
এদিকে, সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। যেটি ছিল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আপসেট। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গ্রুপ সেরা হিসেবেই শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। খোলস থেকে স্বরূপে ফেরা লিওনেল মেসির দল নিজেদের লক্ষ্য ধরে রেখেই নক-আউটে পার হয়েছে অস্ট্রেলিয়া বাঁধা।
মেসির সৃজনশীলতাকে হুমকি হিসেবেই দেখছেন ডাচ কোচ ফন গাল। তিনি বলেন, ‘মেসি সবচেয়ে বিপদজনক এবং সৃজনশীল খেলোয়াড়। তিনি অনেক গোলের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন আবার নিজেও গোল করতে পারেন। কিন্তু যখন তারা বল হাতছাড়া করবে, তখন তিনি কিছুই করতে পারেন না। আর এটিই হচ্ছে আমাদের সুযোগ।’
মজার ব্যাপার হচ্ছে বিশ্বকাপ ও প্রীতি ম্যাচ মিলিয়ে দুই দলের বিগত নয়বারের মোকাবেলায় আর্জেন্টিনা কখনো নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যে হারাতে পারেনি নেদারল্যান্ডকে। ২০১৪ সালে সাও পাওলোতে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের সেমিতে ডাচদের হারিয়েছিল টাইব্রেকারে। ওই সময়ও হল্যান্ডের কোচ ছিলেন ফন গাল, যার হৃদয়ে এখনো গেঁথে আছে পরাজয়ের ওই মুহুর্তটি।
ফন গাল বলেন, ওই ম্যাচে ডাচ খেলোয়াড়রা মেসিকে নিস্ক্রিয় করে ফেললেও টাইব্রেকারে হারিয়ে তাদের শিরোপা স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয় আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ডাচ সমর্থকদের সবচেয়ে সেরা সুখস্মৃতি হচ্ছে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ। ওই সময় শেষ মিনিটে গোল করে ডাচদের শেষ আটে পৌঁছে দিয়েছিলেন ডেনিস বার্গক্যাম্প। তারা শেষ মিনিটের দুর্দান্ত গোলে ২-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছিলো ডাচরা।
শীর্ষস্থানীয় দলগুলোর মধ্যে কখনো বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করতে না পারা দল হিসেবে সবার আগে রয়েছে নেদারল্যান্ড। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ সালে রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ডাচদের। এর ভেতর আবার ১৯৭৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা ৩-১ গোলে হেরেছিল এই আর্জেন্টিনার কাছে।
এদিকে আর্জেন্টিনাও জানে তাদের ফুটবলের অতীত ইতিহাস। তারা জানে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের সংগ্রামের কথা। তারা এখন এমন একটি দলের মোকাবেলা করতে যাচ্ছে যে দলটি এই আসরে এখনো কোন রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়নি।
কোচ স্কালোনি বলেন, ‘এটি আগের ডাচ দলগুলোর মতো মেধাবী নয়। তবে তারা নিজেদের করণীয় সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই অবগত। ঐতিহাসিক দুই দলের মধ্যে দুর্দান্ত একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।’