পাবনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নাকের পলিপাসের অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সিরাজুল ইসলাম (৩০) নামে এক টেক্সটাইল প্রকৌশলীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে পাবনার পৌর সদরের গোপালপুরের লাহিড়ীপাড়া এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি ‘ডিজিটাল হাসপাতালে’ তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার দুপুরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। মৃত সিরাজুল ইসলাম পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে। তিনি হা-মীম গ্রুপের হা-মীম স্পিনিং মিলসের প্রোডাকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই বছর বয়সী একটি পুত্রসন্তানের জনক তিনি।
স্বজনরা অভিযোগ করেন, ‘এক সপ্তাহ আগে প্রকৌশলী সিরাজুল পাবনা সদর থানাসংলগ্ন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদের চেম্বারে চিকিৎসা নেন। সে সময় চিকিৎসক তাকে লাহিড়ীপাড়া এলাকার ‘ডিজিটাল হাসপাতালে’ অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদ ও পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক (এনেসথেসিয়া) চিকিৎসক শামসুল হকের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল হাসপাতালে সিরাজুলের নাকের পলিপাসের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
পরিবারের অভিযোগ—অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা চলে যাওয়ার পরপরই রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এ সময় বারবার চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাকাডাকি করলেও তারা গুরুত্ব দেননি। এক পর্যায়ে রাত ৮টার দিকে রোগীর মৃত্যু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদ, শামসুল হক এবং হাসপাতালের ম্যানেজারসহ কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যায়। পরে স্বজনরা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে জানতে চিকিৎসক হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এনেসথেসিয়া চিকিৎসক শামসুল হক দাবি করে বলেন, ‘আমি যখন তাকে এনেসথেসিয়া প্রয়োগ করি তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। অস্ত্রোপচারের পর তার জ্ঞানও ফিরেছিল, সে সময় তার সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। পরে তার মৃত্যু কীভাবে হলো এটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে আমাদের কোনো ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়নি।’
এ ব্যাপারে পাবনা সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে দেখব।’
পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বোঝা যাবে কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের স্বজনদের লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’