শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প ঙ্ ক্তি মা লা

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:৫৩

অসম্ভব এক কসরত

মারুফ রায়হান

এই যে আমরা যোগাযোগহীনতার খেলা খেলছিলাম
(যখন ন্যানো সেকেন্ডে আটলান্টিকের ওপাড়ের কণ্ঠস্বর
আছড়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরতীরে)
এই যে সযত্নে দূরত্ব রেখে চলছিলাম
তার ভেতরে মস্ত একটা ফাঁক ছিল।
ছিল না?

বছর পার করে
কিংবা একটা জনমই ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে
আমি বা তুমি ঠিক হুট করে একদিন
সকালবেলার রোদের সোনায় মনটাকে মুড়ে
দেখা করতাম
সে আমি কিংবা তুমি হই, কিছু এসে যায় না
আদতেই আমরা তো আর আলাদা নই
এক হয়েই আছি

আর দেখা করার পর মুখোমুখি কফি খেতে খেতে
আমাদের মনেই হতো না যে এতটা কাল
আমরা ছিলাম শীতঘুমে
আমরা পরস্পরকে ভুলে থাকার ভান করে গেছি
সমান দুভাগ করা অর্ধচুম্বকঅর্ধলোহা হয়ে
আমরা শুধু-শুধু দূরে থাকার
অসম্ভব এক কসরত করে চলেছি
-----------------------------------


জীবন ও ধূলির
অনন্ত কাব্য

রবিউল রতন

আমি আর কত বলব
লাঙলের ফলায় সঙ্গমের ইতিহাস,
সৃষ্টি থেকে এ যাবত্কাল, আমি থেকে তুমি
বদল করে নিয়েছ রূপ!
তোমার আঙুলের ডগায়
এখনো রাত্রির চাঁদ হাসে,
গভীর সমুদ্র থেকে উড়ে আসে লবণের ঘ্রাণ।

আহা বাউল, তুমি আর কত গাইবে
জীবনের ছেঁড়া গান?
জলে-স্থলে কী অপূর্ব লাবণ্য তোমার!
ভালোবাসার আকাশ ছুঁতে গিয়ে,
যারা পথ ভুলেছিল, তারা কেউ বাড়ি ফেরেনি।

হেমন্ত বিকেলে হলুদ ধানের মুখ দেখে
খুব আফসোস করে বলেছিলে তুমি—ভালোবাসি
তারপর সন্ধ্যা সাঁতার কাটে এপারে-ওপারে
বিশ্রামের কারাগারে পাখি ও মনুষ্য চোখ
ক্লান্ত পৃথিবীর পথে কারা যেন রেখে যায়
জীবন ও ধূলির অনন্ত কাব্য।

[ময়মনসিংহ]
-----------------------------------


প্রত্যাশা
বারুদ

এনাম রাজু

গতকাল চুরি গেছে কিছু কুয়াশা আর কাশফুলের বন। যেভাবে হারিয়েছি ট্রয়ের ইতিহাস, ভূগোলের লাল চোখ, গ্রামীণ জীবন। অতীত হেসে হেসে বলে তারও ছিল সোনালি যৌবন। স্মৃতির পাতা খুলে স্বপ্রমাণে ব্যস্ত ইতিহাসপ্রীতি। হারিয়েছি গতরাতে সেইসব ফাইলও যা নয়মাসের রচনাগীতি। যেভাবে গুম হয়ে গেছে মানচিত্রের শরীর আর গুম হয়েছে স্রোতস্বিনী নদী। হারালে চোখ, টাকা, বউ-বেটির প্রথম ওড়না পরাকালীন প্রণয়। ফেরে না কখনো তা ফের ঋতুর রূপ, ঘুম ভেঙে গেলে স্বপ্নে দেখা অসমাপ্ত বিজয়।
তবু নয় যখন ছয় বলে সাপকে মালা করে গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বলে পুরস্কার, সেটা অভিশাপ, তাও চুরি গেছে গত রাতে। তবু চুপচাপ যেন পুরনো ইতিহাস ফেরে প্রভাতে।
-----------------------------------


খেত-খামার বিষয়ক কবিতা

অদ্বৈত মারুত

এমন উৎপাদন বাসনা হৃদয়ে পুষে রাখাই উত্তম
হৃদয়ের কাছাকাছি হলে বুঝিয়ে দিও মরার স্বাদ।
উজান থেকে ফিরে আসতে দিও একরত্তি কাঠ
তা চেপে ধরে এনে পেট চিরে ফেলো করাতে।

তাতে গতি হবে উনুনের; ফার্নিচার হবে হৃদয়ে
পুড়ে গেলে হবে কাঠকয়লা; দাঁতে ঘষবে কেউ;
পুরো জীবন এভাবে সংসারের প্রমোদে থেকেই
ফড়িংযাপন করে পাওয়া যায় চিতায় পোড়া ঘ্রাণ।
 
একাকী হাঁটি; উঠোনে ধানকবুতর—নগ্ন শিশির
শব্দের উনুনে পোড়াই মোরগের ভোর; লাঙল...
-----------------------------------


বিজয় তোমাকে খুঁজি

বাবুল তালুকদার

তোমার কাছে যেতে চাই—বিজয়
হয়রান আমি—তোমাকে খুঁজে খুঁজে।

ভোর হলেই দেখতে হয় অবিশ্বাসের জীবন
শূন্য পকেটে হেঁটে বেড়াই প্রতিদিন
অগ্নিশিখায় জ্বলে হৃদয়
বিজয় আমাকে সজীব করো

প্রাণে বাঁচাও—
-----------------------------------


লালম্বি বনে

রোখসানা ইয়াসমিন মণি 

জৈমিনি, 
আমার চিন্তায় আসবে ভাবিনি
মহাসিন্ধুকাল অতিক্রম করে
প্রাণের ভেতর।

এখানে সমতটে কোনো এককালে
রোহিতগিরির পথে, 
চোখের পলকে হারিয়ে গেছে
এক রাখাল বালক।

তার নিরুদ্দেশের ফলে
খুঁজে চলি সেই বাঁশি আজো 
মেঘেদের দলে,
তাকে পেতে করেছি ভ্রমণ
লালম্বি বনে।

জৈমিনি, সেই বনে রাখা আছে 
এক অজানা কেতাব,
যার প্রতিটি পাতার ভেতর 
আমার পুলসেরাত।
-----------------------------------


আগুনের
ভাষা থেকে

আরিফুল হাসান

জেগে ওঠে ফুলের আগুন।
তারপরে গ্রামের পর গ্রাম

পুড়তে থাকলে ছাই হতে থাকলে
লাশের বিনিময়ে জাগতে জাগতে মানুষ

একদিন ভোর আনল সম্ভ্রমে—
নয় মাসের অন্ধকার ভেদ করে বহ্নিশিখা।
-----------------------------------


তজুমদ্দিন চর

মোহামেদ সাইফুল হাসান রাকিব

তোমারে দেখলে সব কথা ক্যান যেন ফুরায়ে যায়, তজুমদ্দিন চরের আধখাওয়া বিকেলের স্মৃতি ধরা পড়ে চোখে, একটি স্রোতস্বিনী নদী—উথালপাথাল ঢেউ, সঙ্গে পারিজাতের আঁকাবাঁকা পরিগমন। মহিষ পালের অর্ধ ডুব এঁদো জলে, সাদা শাড়ির সবুজপাড়ে বধূ সাজে বিস্তৃত চর। হ্যাংলা গড়নের মলিন বালক আরব পয়গম্বরদের লাঠি হাতে আথালে ফিরায় জীবিকার বিশৃঙ্খল অবুঝ প্রাণ। তোমারে দেখলে সব কথার ক্যান যেন দাফন হয় প্রথম দেখার সেই নিদারুণ সৌন্দর্যে!

[খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়]
-----------------------------------


যেহেতু আমি

চন্দন চৌধুরী

আমার ভেতর একটা মানুষ আছে, ভাঙা
ছোটবেলা শ্লেটে নিজেকে এঁকে আমি ভেঙে ফেলেছিলাম
আমার ভেতর আরেকটা মানুষ আছে, মুছে যাওয়া
তীরের বালুকায় নিজেকে এঁকে আমি মুছে ফেলেছিলাম
আমার ভেতর আরও একটা মানুষ আছে, হারিয়ে যাওয়া
একবার নিজেকে এঁকে ডাকে পাঠালেও সে আর ফিরে আসেনি
এমন অনেক আমি আছে আমার ভেতর
প্রত্যহ আমার সঙ্গে ঝগড়া করে
আমি রাগ করতে পারি না
কারণ বয়সে তারা আমার বড় নয়, ছোটও নয়

ইত্তেফাক/এসটিএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন