বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হারানো পথে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা

লাঠিখেলায় অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:১০

লাঠি নিয়ে শারীরিক কসরত আর অঙ্গভঙ্গি, নৃত্যের তালে তালে ঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের ঝংকারে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ, প্রতিআক্রমণ সঙ্গে আত্মরক্ষার নানা কৌশল সম্বলিত উত্তেজনাপূর্ণ একটি খেলার নাম লাঠিখেলা। যা বাঙালির লোকসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে বিজাতীয় খেলার ভিড়ে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ক্রমেই হারাতে বসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যারা লাঠি খেলেন তাদের বলা হয় লাঠিয়াল। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদারদের শাসনকার্যে সহযোগিতার জন্য থাকতো বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী। কালের বিবর্তনে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে। প্রয়োজন ফুরিয়েছে লাঠিয়ালদের। বংশ পরম্পরায় রূপান্তর ঘটিয়ে এ লোকজ খেলাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন তাদের বংশধররা। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ খেলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন তারাও। ফলে নতুন খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না।

লাঠিয়ালরা জানান, এ খেলায় দলে থাকেন একজন নেতা, যাকে তারা ওস্তাদ ডাকেন। এ খেলায় সাধারণত সর্বোচ্চ ৩০ জন অংশ নেন। ক্ষেত্র বিশেষ কমবেশিও হতে পারে। বাংলা বর্ষবরণ, চড়ক পূজা, মহরম ইত্যাদি উপলক্ষে লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে এ খেলার প্রচলন বেশি। অঞ্চল ভেদে এ খেলার ধরনে ভিন্নতা রয়েছে। পাইট, বেনিয়ম, শেয়াল ধরা, পাশের বাড়ি, মৃত্যু বাড়ি, পিরি, বৈশালী এর মধ্যে অন্যতম।

সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অনুষ্ঠিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হ্যান্ডবল ও ভলিবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় লাঠিখেলা। এতে কুষ্টিয়ার নওদাপাড়া লাঠিয়াল বাহিনীর অন্তত ৭০ জন সদস্য লাঠিখেলা পরিবেশন করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ক্যাম্পাসের আশপাশ এলাকার নানা বয়সী শতশত মানুষ আগ্রহ নিয়ে এ খেলা উপভোগ করেন।

ষাটোর্ধ নওদাপাড়া লাঠিয়াল বাহিনীর ওস্তাদ মিজানুর রহমান জানান, একদম ছোটবেলা থেকেই এ খেলার সঙ্গে যুক্ত আছি। পেশা হিসেবে এতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই। তাই সংসার চালাতে চালের ব্যবসা করি। পাশাপাশি বাপ-দাদাদের ঐতিহ্য হিসেবে লাঠিখেলাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে এ খেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে যেনো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়।

বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শাহীনা সুলতানা দিজু বলেন, লাঠিখেলার তিনটি লক্ষ্য রয়েছে আত্মরক্ষা, শরীরচর্চা ও বিনোদন। নারীদের আত্নরক্ষার কৌশল শেখাতে এ খেলার প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল এ খেলাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে ইবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, আগেরকার সময়ে লাঠিখেলা ছিল গ্রামাঞ্চলের মানুষের নির্মল বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। কালক্রমে হাডুডু, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধাসহ অনেক গ্রামীণ খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই নতুন প্রজন্মের মাঝে এ খেলা পৌঁছে দেয়া দরকার। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লাঠিখেলাসহ ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা পুনরায় বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব।

ইত্তেফাক/আরএজে