শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির লটারি

আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:০২

দেশের প্রাথমিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষ হবে ১৯ ডিসেম্বর। উত্তরপত্র মূল্যায়ন শেষ হবে ২০ ডিসেম্বর। আর ২১ ডিসেম্বর পঞ্চম শ্রেণির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। অথচ এই পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯ দিন আগেই সরকারি হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির লটারি অনুষ্ঠিত হয়। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নানামুখী ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। প্রাথমিকের শিক্ষকেরা বলছেন, প্রতি বছরই এমনটি হচ্ছে। আর এতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা বিপাকে পড়ছেন।

প্রাথমিকের পরীক্ষা নিয়ে থাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী শেষে শিক্ষার্থীরা হাইস্কুলে ভর্তি হয়। এই স্কুলগুলো পরিচালনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। দুই অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়।

 দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এ ছাড়া এনজিও পরিচালিত বেসরকারি স্কুলসহ সব মিলে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, যারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী হবে না। তবে স্কুলে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরই শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করার কথা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য দেশের সরকারি স্কুলে ১২ ডিসেম্বর ও বেসরকারি স্কুলে ১৩ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। অথচ এখনো পঞ্চম শ্রেণিতে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা চলছে, যা শেষ হবে ১৯ ডিসেম্বর। আর ফল প্রকাশিত হবে ২১ ডিসেম্বর।

যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (উপপরিচালক) ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ফল প্রকাশের আগেই প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ দিয়েছি। তারা স্কুল থেকে প্রত্যয়নপত্র এনে ভর্তি হতে পারবে।’

অন্যদিকে ঢাকার এক প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, শিক্ষার্থীরা পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার জন্য স্কুলের কাছে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে কাউকে  উত্তীর্ণের প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এমন একটি পত্র দেওয়া হচ্ছে।

এই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এ দুটি বিষয় নিয়ে হযবরল হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা আগে নেওয়া উচিত। অন্যথায় পঞ্চম শ্রেণির ফল প্রকাশের পর ভর্তি লটারির আয়োজন করা হোক। বছরের পর বছর এই অবস্থা চলছে।

শ্যামলী নামে এক শিক্ষক বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়, আবার লটারিতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যায়, তাহলে কী হবে?  জান্নাতুল নামে এক অভিভাবক বলেন, প্রাইমারি স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি, অথচ শিক্ষার্থীরা লটারির মাধ্যমে ইতিমধ্যে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হওয়ার টিকিট পেয়ে বসে আছে। আমরা কীভাবে নিশ্চিত হলাম যে, ক্লাস ফাইভের সবাই বার্ষিক পরীক্ষায় পাশ করবে? কিংবা সবাই ক্লাস সিক্সে ভর্তি হওয়ার যোগ্য?

প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, প্রতি বছরই এই সমস্যা চলছে। এর সমাধান হওয়া উচিত। দুই অধিদপ্তরের সমন্বয়হীনতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হয়।

সুলতান আহমেদ নামে এক অভিভাবক বলেন, সন্তানের পরীক্ষা চলার মধ্যেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে লটারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। টেনশনের মধ্যেই ছিলাম। লটারির আবেদনের সময় কোনো প্রত্যয়নপত্র দেওয়া না লাগলেও এখন লাগবে। একদিকে ভর্তি শুরু হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষাই শেষ করতে পারেনি স্কুলগুলো। ফলে নানা ধরনের শঙ্কা ও ভোগান্তি লেগেই থাকে।

 

ইত্তেফাক/ইআ