ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ঠাকুরবাখাই গ্রামের বাসিন্দা বীরাঙ্গনা সুরবালা সিং (৮৩)। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের জীবন্ত সাক্ষী এই নারী আজও স্বীকৃতি পাননি মুক্তিযোদ্ধার। হতাশা নিয়ে জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো কাটাচ্ছেন অনাহার-অর্ধাহারে। প্রবীণ এই নারীর একটাই চাওয়া গেজেটভুক্ত হওয়া।
শুধু সুরবালা নন, স্বাধীনতার ৫১ বছরেও সুফিয়া খাতুন, শহরবানু, জেলেখা খাতুন আর গুলনাহার খানমের মতো কমপক্ষে ৪৭ জন বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পাননি। দেশের জন্য ত্যাগী এই নারীরা আজও অসহায় অবস্থায় একটু সামাজিক সম্মান আর স্বীকৃতির আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৩তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৬ জুন গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে ৪১৬ জন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পান। পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩৮ জনে। কিন্তু অজানা কারণে এ প্রক্রিয়া এখন থমকে আছে।
বিজ্ঞজনেরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বীরাঙ্গনারা। কিন্তু তাদের যুদ্ধটা স্বাধীন দেশের ৫০ বছর পরেও শেষ হয়নি। স্বাধীন দেশে এই বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জরুরি। তাদের বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা জরুরি। তাছাড়া এই নারীদের নিয়ে লেখনিতে শব্দ চয়নেও সংযত হওয়া প্রয়োজন।
হতদরিদ্র প্রবীণ এই নারীদের নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি নারী অধিকার সংস্থা ‘নারীপক্ষ’। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শিরীন হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পর বীরঙ্গনাদের নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। সেটা ছিল ২০১১ সাল। বীরাঙ্গনা উপাধি দেওয়া হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর। তখনকার সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এই উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, ঐ নারীদের যেন কেউ অপমান না করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেল, বীরাঙ্গনা একটা ‘গালি’তে পরিণত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের নিজেদের পরিবারেও টিকতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রে তারা গ্রাম থেকেও বিতাড়িত হয়েছেন। তাদের বীরাঙ্গনা উপাধি দেওয়া হলেও এর সঙ্গে যে সামাজিকভাবে আরও অনেক পদক্ষেপের দরকার ছিল, সেগুলো করা হলো না।
শিরীন হক আরও বলেন, আমরা মোট ৭৮ জন বীরাঙ্গনার সংস্পর্শে এসেছি। তাদের মধ্যে কয়েক জন মারা গেছেন। কয়েক জন গেজেটভুক্ত হয়েছেন। আমরা চাই, সবাই গেজেটভুক্ত হোক। গেজেটের বাইরে আছেন এখনো ৪৭ জন। গেজেটভুক্ত হলে তারা ভাতাসহ অনেক ধরনের সুবিধা পাবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ইত্তেফাককে বলেন, বীরাঙ্গনাদের গেজেটভুক্ত হতে আবেদনের সুযোগ আছে। আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট উপজেলার তিনজন প্রথম শ্রেণির নারী কর্মকর্তার মাধ্যমে তাদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই বাছাই করে সুপারিশ এলে গেজেটভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।